ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নির্যাতনে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান
দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ৩০ বিশিষ্ট নাগরিক। বুধবার (১ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ কথা জানান তারা। বিবৃতিতে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসনকে নির্লিপ্ততা ভেঙে তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একাডেমিক স্বাধীনতা এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগসমূহ অন্যতম প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেশ কিছুদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের (ছাত্রলীগ) হাতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ভিন্নমতের ছাত্রছাত্রীদের উপর নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগসমূহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলাহয়, সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের শুধু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের প্রায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৩০টিরও বেশি চাঁদাবাজি, ছাত্র নির্যাতন, আবাসিক হলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে যেখানে বিভিন্ন নেতা কর্মীর নাম উল্লেখ রয়েছে। একাডেমিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে শারীরিক নির্যাতনের মতো বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্তৃক এসব দুর্বৃত্তপনার অভিযোগের ব্যাপারে আমরা দেশের ৩০ জন নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বিবৃতিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে রাতভর নির্যাতন, চমেকের চার ছাত্রকে শিবির সন্দেহে মারধর করে আইসিইউ-তে পাঠানো, বুয়েটের এক দম্পতির কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিনতাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে ২ ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মাখদুম হলের 'কৃষ্ণ রায়' নামক এক আবাসিক ছাত্রকে মারধরসহ ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, আজকের পত্রিকা এবং দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত মোট ১০ টি সংবাদের তথ্য উল্লেখ করা হয়।
নাগরিকরা বলেন, একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আমরা এসব ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত, শংকিত ও ক্ষুব্ধ। এই শঙ্কা ক্রমশ বাড়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসম্ভব নির্লিপ্ততার অভিযোগও গণমাধ্যম গুলোতে প্রচারিত হয়। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নির্লিপ্ততা ভেঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী,অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্যাহ, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক মোঃ লুৎফর রহমান, পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান; অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, অধ্যাপক কামরুন্নেসা খন্দকার, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কান্ট্রি স্পেশালিস্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ।
এছাড়া, আরো রয়েছেন, সায়েন্টিফিক বাংলাদেশের এডিটর ড. মুনির উদ্দিন আহমেদ, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক প্রকৌশলী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব; সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবুল কালাম মানিক, লেখক ও গবেষক জিয়া হাসান, মোঃ সাইমুম রেজা তালুকদার, আইনজীবি ও সদস্য, বাংলাদেশ ইন্টারনেট ফ্রিডম ইনিশিয়াটিভ ওয়ার্কিং গ্রুপ; নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ-নাবিক'র আহ্বায়ক ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান; জলবায়ু গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ; আইনজীবী অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ব্যারিস্টার মো. জীশান মহসীন, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, সিভিল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ'র (সিআরআই,বি) এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট আহসান হাবীব; পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দীন, লেখক ও গবেষক জাকারিয়া পলাশ, মানবাধিকার কর্মী ইজাজুল ইসলাম এবং লেখক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সোহেল রানা।