ফাঁকা আসন পূরণে নিচে নামতে চায় না কুবি, ভর্তিচ্ছুদের ক্ষোভ
‘আমি একজন গুচ্ছ পরীক্ষার্থী ছিলাম। কিছু ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে শুধুমাত্র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম। আশায় ছিলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পাবো। কিন্তু যখন কাট মার্ক আমার নম্বরের কাছাকাছি এলো তখন তারা ৫৩ সিট খালি রেখে ভর্তি বন্ধ করে দিল। ফলে আমার এতবছরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।’- এভাবেই বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভর্তিচ্ছু। ৫ শতাংশ আসন ফাঁকা রেখেই গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আনুষ্ঠানিক ভর্তি কার্যক্রম শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলছে সারা বছর ভর্তি নিব নাকি? আমরা তো বলছিনা সারাবছর নিতে। তারা সিটগুলো পূর্ণ করুক। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ৪ টা সিট এর জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আর এখানে এত সিট ফাঁকা কিন্তু ভর্তি অফ করে দিল। আমাদের মেরিট ও জানতে পারিনি, সুযোগ ও পাইনি।
আরও পড়ুন: গুচ্ছে থাকার বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সভা আজ
শুধুমাত্র এই শিক্ষার্থীই নয় একই অভিযোগ আরো একাধিক শিক্ষার্থীর। ভর্তিচ্ছুদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে দাবি করে অপর এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনেক অনেক শিক্ষার্থী আশায় আছে। একটা সুযোগ অন্তত দিক। তারা ৫০০০ জন এর পর আর মেরিট দেয়নি ডাকেওনি। আমাদের প্রতি অন্যায় করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ‘এ’ ইউনিটে একটি; ‘বি’ ইউনিটভূক্ত (বিভাগ পরিবর্তনজনিত আসন ৪৪টি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৮টি, বিজ্ঞান অনুষদে ৪২টি এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ২টিসহ মোট ৫৩টি আসন ফাঁকা রয়েছে। ৫৩ টি আসনের মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত প্রত্নতত্ত্ব বিভাগেই রয়েছে ২৪টি আসন ফাঁকা, এছাড়া নৃবিজ্ঞান বিভাগে ১৭টি ফাঁকা আছে ।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন কুবির বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০২০ সেশনের শিক্ষার্থী সায়েম মুহাইমিন বলেন, "প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার একটা স্বপ্ন থাকে। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের থেকে বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব নিয়ে থাকে শুধু নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। আর জনগণের এসব কল্যাণ নিশ্চিত হয় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এমন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৩ টি সিট ফাঁকা রেখে যখন ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তখন নাগরিক হিসেবে একজন শিক্ষার্থীর অধিকার কতটুকু নিশ্চিত হলো তা আসলেই আলোচনার দাবি রাখে।
আরও পড়ুন: মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শুধু ব্যবসা করলে চলবে না: রাষ্ট্রপতি
এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন. এম. রবিউল আউয়াল চৌধুরী জানান, অনেকগুলো বিষয় বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথমত, ইতোমধ্যেই অনেকগুলো বিভাগ ক্লাস শুরু করে দিয়েছিল। আমরা সেশনজট কমাতে চেয়েছিলাম এবং প্রত্যেকটা বিভাগ যাতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার স্ট্রিক্টলি ফলো করে তাই আমরা ভর্তি ক্লোজ করে দিয়েছি।
দ্বিতীয়ত, যে কয়টা সিট খালি আছে এগুলো পূর্ণ করার দুইটা উপায় ছিল। একটি হলো আবারও রেজাল্ট দেয়া যেত। আমরা রেজাল্ট দিয়েও দেখেছি কিন্তু আশানুরূপ শিক্ষার্থী পাচ্ছিলাম না। এভাবে রেজাল্ট দিতে থাকলে আমাদের দেড়/দুইমাসেও আসন পূর্ণ হবে কিনা সন্দেহ ছিল। দ্বিতীয় উপায় ছিল গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া, এটি আমাদের প্রস্তাবে এসেছিল, আমরা এটাকে বিশ্লেষণ করেছি। এটা সাব্জেক্টিভ হয়ে যায় আর কিছু লুপহোল থেকে যায়। আমরা কোনো বিতর্কিত বিষয়ে যেতে চাইনি।
একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন জানান, আমরা এত নিচের দিকে নামতে চাইনা, গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ ধরনের কোয়ালিটির ছাত্র আমরা নিতে চাই না। আর আমরা যে ছাত্র চাই সে ছাত্র যদি না পাই তাহলে তো আমরা নিতে পারবো না।
এছাড়া, আমাদের জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে, এখনও যদি আমরা ভর্তিই নিতে থাকি, তাহলে সেশনজট হবে। আমরা এবার একাডেমিক ক্যালেন্ডার স্ট্রিক্টলি ফলো করতে চাচ্ছি। শুধু এক দুইটা বিভাগের জন্য শিক্ষার্থী পাচ্ছি না আমরা, বাকি সব বিভাগের আসন পূর্ণ হয়ে গেছে।