অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি ফুলপরীর, মামলা করবেন আজ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় পাঁচ ছাত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। গতকাল হাইকোর্টে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশের পর এই দাবি জানান তিনি। এছাড়া ন্যায় বিচার পেতে আজ মামলা করবেন জানিয়েছেন ফুলপরী।
ফলপুরী খাতুন বলেন, হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট নই। অভিযুক্তরা আমাকে যেভাবে অমানবিক নির্যাতন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার ও পড়ার কোনো যোগ্যতা নেই ওদের। আমি তাদের সবাইকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। ন্যায়বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমি কুষ্টিয়া আদালতে মামলা করব। মামলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। অন্যায়ভাবে যারা আমাকে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন করেছে দ্রুত তাদের বিচার চাই, শাস্তি চাই।
এদিকে অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কারের আদেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রশিদ ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা অপরাধীদের যে ধরনের শাস্তির আশা করেছিলাম আমরা সে ধরনের শাস্তি দেখতে পাইনি। আমরা চাই তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন আর এই ধরনের কাজ করার সাহস না পায়।
শেখ হাসিনা হলের কয়েকজন ছাত্রী বলেন, এত কিছুর পর সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। উল্টো ভুক্তভোগীকে আরও বিপদে ফেলে দেওয়া হলো। আরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। যাতে এমন ঘটনায় পুনরাবৃত্তি না হয়।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান তার বিধিবিধানের আলোকে চলে। বিধিবিধান মেনেই সমস্ত কাজ সম্পাদন করতে হয়। আইনের বাইরে আবেগতাড়িত হয়ে তাৎক্ষণিক তো আর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী নির্দেশনা ব্যবস্থাগ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে গতকাল বুধবার পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- ইবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া। অন্তরা ছাড়া সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
আদালত বলেছেন, সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচজন কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না। এছাড়া নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে তিন দিনের মধ্যে তার পছন্দমতো হলে আবাসিকতা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
এরই মধ্যে নির্যাতনে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীর স্থায়ী আবাসিকতা বাতিল করেছে হল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শাস্তি এখনো বাকি আছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী শনিবার সিদ্ধান্ত নেবেন কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে বিবস্ত্র করে মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পরদিন ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান ওই ছাত্রী।