আগামী বছর একটি গুচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তাব শিক্ষামন্ত্রীর
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগামী ২০২৩-২৪ সেশনে একটি গুচ্ছে ভর্তি সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ (চবি) দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে এ আহ্বান জানান।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে সভায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভা শেষে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম।
সভায় উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেল দুই বছরের ভর্তি পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রিতা, ভর্তিতে কালক্ষেপণ, উপাচার্যদের সিদ্ধান্তহীনতা, ভর্তিতে নানা জটিলতা ও হয়রানিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও গুচ্ছে না থাকার দাবি জানানোর বিষয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদেরই গুচ্ছে থাকতে অনীহার কারণগুলোও এদিন শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন সভায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিরা। সভায় ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবির প্রতিনিধিরা না থাকলেও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালনালসের (বিইউপি) উপাচার্য।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তিনি একটি ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা চান। প্রয়োজনে স্যাট (একজন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কতখানি তৈরি, তা এ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়ে থাকে)–এর মতো ব্যবস্থা তার সমাধান হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একটি পরীক্ষা হয়। সেখানে হয়তো গণিত, বিজ্ঞান বা ভাষা—এ জাতীয় বিষয় এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে যারা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা দিচ্ছে, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবারও একই বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিচ্ছে। সেটি না করে ভাষা, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের ওপর একটি পরীক্ষা হওয়া উচিত। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটিতে যেতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাকে আরও ভালো করতে হবে।
দীপু মনি মনে করেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেতে যত সময় লেগেছে, নতুন পদ্ধতিতে যেতে তত সময় লাগবে না। তিনি জানান, উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সঙ্গে কথা বলে যে ধরনের মতামত পাওয়া গেছে তাতে মনে হয়, হয়তো অনেক কম সময়েই নতুন পদ্ধতিতে যাওয়া যাবে।
এর আগে গত বছরও শিক্ষামন্ত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, আমরা প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছি। কিছু ভুলত্রুটি থাকবেই। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
সভায় থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম জানান, আমরা আমাদের দাবিগুলোর বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন; গুচ্ছ সংক্রান্ত নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি এসব সমস্যা সমাধানের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বিক ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে ২০২০-২০২১ সেশন থেকে শুরু হয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। স্বায়ত্তশাসিত ও বিশেষায়িত ছাড়া প্রথমবার ২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শুরু হরেও পরের বছর থেকে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে শুরু হয় এ ভর্তি প্রক্রিয়া। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য বিবেচনায় যতটুকু ইতিবাচক আশার সঞ্চার করার কথা ছিল দুই সেশনে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে তার চেয়েও বেশি হতাশার সৃষ্টি করায় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথাও আসে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতি থেকে।
গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে বেশ কয়েকবার দাবি জানিয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)। সর্বশেষে তারা গত ২২ ফেব্রুয়ারি এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসার কথা থাকলেও শেষ মূহুর্তে বাতিল হয় সে বৈঠক। এছাড়াও গুচ্ছ থেকে বের হতে আগ্রহী কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরাও।
শিক্ষকরা বলছেন, ভর্তিতে দীর্ঘ-সময়ক্ষেপণ, শিক্ষার্থীদের হয়রানি, সেশনজট, ফলাফল সংক্রান্ত জটিলতা এবং গুচ্ছ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকাসহ বিবিধ নেতিবাচক বিষয়ের সমাধান হওয়া দরকার। পাশাপাশি তারা মনে করেন, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়াটি আরও পরিকল্পিত হওয়া উচিৎ। সেজন্য চলমান কৃষি গুচ্ছের মতো করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আলাদা, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আলাদা ভর্তি প্রক্রিয়া বা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে বিষয় প্রদানের পাশাপাশি গুচ্ছের চলমান অব্যবস্থাপনার সমাধান চান তারা।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৫৩টি সরকারি এবং ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি এবং কয়েকটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অধিকাংশই গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যাতে গুচ্ছ-ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হতে পারেন। আর ১৯৭৩ সালের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ থাকে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে।