প্রযুক্তির উন্নতির সাথে মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে হবে: খুবি উপাচার্য
সভ্যতার শুরুতে ধর্ম, আইন, দর্শন, সাহিত্য, অর্থনীতি শিক্ষার প্রসারের ধারায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এসেছে শেষে। কিন্তু, এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার সব কিছুকে ছাপিয়ে চলেছে। আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে হবে, তা না হলে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা কাজে আসবে না। এখন প্রয়োজন এ দুইয়ের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি করা বলে মন্তব্য করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক স্কুলের আয়োজনে ‘একুশ শতকের মানবিক শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
উপাচার্য বলেন, আমাদের মনে হতে প্রযুক্তির উৎকর্ষ কলা ও মানবিক-বিদ্যাসহ অনেক কিছুকেই গিলে ফেলছে; আসলে কি তাই? প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ তো মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যেই। তবে আমাদের দেখতে হবে প্রযুক্তি যেন মানুষের সৃজনশীলতা রুদ্ধ করে না দেয়। কারণ, প্রযুক্তি উন্নতি তো মানুষের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্য, সমাজের উন্নয়নের অভীষ্টে।
প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, একুশ শতকে চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের কর্মস্থল বা কাজের জায়গা দখল করে নিলেও তা তো মানুষ সৃষ্টি করেছে। তাই যতোই হোক না কেনো এ প্রযুক্তি যদি মানবিক মূল্যবোধকে এড়িয়ে যেতে চায় তা হবে মানব সমাজের জন্য বিপর্যয়কর। তিনি বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ উপস্থিত। তবে তা মোকাবেলা করতে হবে, জীবনের সাথে খাপ-খাইয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানসিক প্রশান্তি হচ্ছে শেষ কথা। এই মানসিক প্রশান্তি থাকলে সৃজনশীলতা থাকবে। আর সৃজনশীলতার জন্যই কলা ও মানবিক-বিদ্যা চর্চার গুরুত্ব আগেই ছিলো, ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে সে জন্য দিকনির্দেশনা দিতে হবে।
উপাচার্য মনে করেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক স্কুল প্রথমবারের মতো সময়োপযোগী বিষয় নির্ধারণ করে যে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে তা থেকে পাওয়া সুপারিশ একুশ শতকে মানবিক-বিদ্যা চর্চার ভূমিকা ও গুরুত্বসহ আরও নানাদিক তুলে ধরে দিকনির্দেশনা দেবে।
উপাচার্য কলা ও মানবিক স্কুল এই আন্তর্জাতিক আয়োজন করায় স্কুলের ডিনসহ সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনসমূহের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এসময় উপাচার্য সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত কনফারেন্স প্রসেডিংসে মোড়ক উন্মোচন করেন।
এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. রুবেল আনছার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইংরেজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান কবীর।
সম্মেলনের প্রথম দিনে কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন জার্মানি থেকে আগত ইমেরিটাস প্রফেসর ড. টোবে লেভিন ফ্রেইফ্রাউ ভন গ্লেইচেন, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারি।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. দুলাল হোসেন ও ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক রুমানা রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন কলা ও মানবিক স্কুলভুক্ত ডিসিপ্লিনসমূহের প্রধান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী গবেষকরা।
আজ এ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠিত হবে। এদিন কি-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক প্রফেসর ড. পবিত্র সরকার এবং বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান, খ্যাতনামা লেখক, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।