‘তদন্তের জন্য যখনই ডাকা হবে তখনই আসব’
তদন্ত কমিটির ডাকে আবারও ক্যাম্পাসে এসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নির্যাতনের শিকার নবীন ছাত্রী ফুলপরি খাতুন। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে তার বাবাসহ ক্যাম্পাসে শেখ হাসিনা প্রবেশ করেন তিনি। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এখনো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি।
এতে বিভাগীয় তদন্ত কমিটির পাশাপাশি রয়েছে হল প্রশাসনও। এদিন তদন্ত করতে ক্যাম্পাসে এসেছেন হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এবং তারা প্রক্টরের কার্যালয়ে ১টা পর্যন্ত থেকে ঘটনাস্থলে (দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল) যান।
এ নিয়ে সহকারী প্রক্টর ড. শফিক বলেন, প্রভোস্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা ওই ছাত্রীকে রিসিভ করে হলে দিয়ে এসেছি।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে ওই ছাত্রীকে আজ ক্যাম্পাসে ডাকা হয়েছে।
ভুক্তভোগী জানান, তদন্তের জন্য যখনই আমাকে ডাকা হবে। তখনই আমি আসব। আমি ন্যায় বিচার চায়, না আসলে তো বিচার পাব না।
প্রসঙ্গত, গত গত রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ডেকে নিয়ে নবীন ওই ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। রাতভর নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ওই ছাত্রীর ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী ছাত্রী।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। এসময় তার সঙ্গে আরও ৫-৬ জন ছাত্রী জড়িত ছিলেন। তাদের সবার নাম-পরিচয় জানা না গেলেও তাবাসসুম নামে একজনের পরিচয় মিলেছে। তিনি ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। আর ভুক্তভোগী ফুলপরি খাতুন একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী জানিয়েছিল, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তাবাসসুম সকলের কাছে জানতে চান দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে কারা থাকেন। আমি হাত উঠালে আপু আমাকে বলেন, হলে উঠেছো আমাকে আগে জানাওনি কেন। এ সময় আপু আমাকে রাত ৮টায় প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই যেতে পারি নাই। তা ছাড়া আমি সবকিছু তেমন চিনতামও না।
‘‘দু’দিন পরে আমি ওই রুমে গিয়ে ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের কেউ আছে কিনা জানতে চাই। ওইসময় আপু ঘুমিয়ে থাকায় আমি চলে আসি। পরের দিন ক্লাসে আসলে আপু আমাকে খুবই ঝাড়ি দেয়, বলেন তুমি বড়দের সম্মান করতে জানো না, আমাদেরকে আপু বলো না, তুমি উপরে থাকো বলে নিচে সাপের পাঁচ পাও দেখেছো এরকম কথা বলে ধমক দেয়’’।
ভুক্তভোগী উল্লেখ করেছেন, আমি বলি আপু আপনারা এরকম করলে আমি হল প্রধানকে বলবো। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অন্তরা আপুর কাছে নিয়ে যায়। ওইদিন রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আমি অন্তরা আপুর রুমে ছিলাম। এসময় আপুর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছি। পরে আপুরা আমাকে হল থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি র করে দেয়।
‘‘পরে হলের স্যাররা আমাকে অন্তরা আপুর দায়িত্বে দিয়ে আসেন। এসময় আপু আমাকে ৩০৬ নম্বর রুমে যেতে বলেন। আমি ৩০৬ নম্বর রুমে চলে যাই। পরে রাত ১১টার সময় অন্তরা আপু আমার রুমে গিয়ে আমাকে গণরুমে যেতে বলেন। গণরুমে গেলে আপু আমাকে মারধর করেন, পায়ে পিন ফুটান। অনেক বাজে বাজে ভাষায় কথা বলেন।’’
ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী লিখেন, এক পর্যায়ে আপু আমাকে জোর করে আমার জামা খুলিয়েছেন। পরে বিবস্ত্র অবস্থায় আমার ভিডিও ধারণ করেন। প্রভোস্ট স্যারের বিরুদ্ধে লিখে আমাকে তা মুখে বলিয়ে নিয়ে রেকর্ড করেছেন। রাতভর তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করেছেন। পরের দিন সকালে কোনোভাবে হল থেকে পালিয়ে বাসায় চলে আসি।
ফুলপরি খাতুন অভিযোগ করে বলেন, এসময় তারা বলেছে, মুখে মারিস না, গায়ে মার। যাতে কাউকে দেখাতে না পারে। আমাকে তারা খুবই ভয় দেখিয়েছে এবং এসব কথা বাইরে বললে আমাকে একেবারেই মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তারা আরও বলেছে, তোকে হল থেকে উলঙ্গ করে বের করে দেবো। সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে তারা আমাকে শুধু মেরেছে। অন্তরাসহ ৫-৬ জন মিলে আমার সঙ্গে এসব করেছে।