তদন্ত কমিটিকে যা বললেন ইবি শিক্ষার্থী
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ইবি ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। র্যাগিংয়ের নামে অই ঘটনায় একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। গতকাল দুপুরে এক সপ্তাহ পর ক্যাম্পাসে হাজির হয়ে তদন্ত কমিটির কাছে তাঁর ওপর চলা নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাবা ও মামাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন ফুলপরী। সহকারী প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গাড়িতে করে তাঁদের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নিয়ে যান। এ সময় মূল ফটকের সামনে পুলিশের টহল গাড়ি ছিল।
ক্যাম্পাসে ফেরা শিক্ষার্থী দুপুর সাড়ে ১২টায় তদন্ত কমিটির কাছে তাঁর ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া শুরু করেন। বক্তব্য নেওয়া হয় হলের প্রভোস্টের কক্ষে। লিখিত ও মৌখিকভাবে তাঁর বর্ণনা নেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বিকেল পাঁচটার পর তদন্ত কমিটি প্রভোস্ট কার্যালয় থেকে বের হন। একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী বাবা ও মামার সঙ্গে বের হয়ে আসেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ছাত্রী গত বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। এ জন্য তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক ছাত্রীর কাছে অতিথি হিসেবে থাকেন। বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, কারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী হাত তোলেন। হলে ওঠার বিষয়টি আগে তাবাসসুমকে না জানানোয় চটে যান তিনি। এরপর তাঁকে হলের কক্ষে (প্রজাপতি-২) দেখা করতে বলেন। তবে অসুস্থ থাকায় দেখা করেননি তিনি। ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাসে গেলে তাঁকে বকাঝকা করেন তাবাসসুম। ফুলপরীকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
ছাত্রী বলেন, হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা ও তাবাসসুম কী করেছেন, সেটা বলেছি। এই সময় আরও কয়েকজনের নাম বলেছি। তাঁরা হলেন ইশরাত জাহান ও হালিমা খাতুন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী। তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ, অপরাধীদের শাস্তি কেবল বহিস্কার
এই ছাত্রী বলেন, ‘কিছু কথা তদন্ত কমিটির সদস্যরা শুনেছেন। এ ছাড়া চার পৃষ্ঠার লিখিত দিয়েছি। আরও লিখিত দিতে বলা হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে সেগুলো লেখা হবে। তারপর দেব।’ ছাত্রীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘একটাই দাবি, সুষ্ঠু তদন্ত, সুষ্ঠু বিচার। কঠিন বিচার করতে হবে। যাতে বাংলাদেশে এ রকম কাজ আর কোনো জায়গায় না ঘটে। এমনকি পৃথিবীতেও না ঘটে।’
বিকেল পাঁচটার পর ফুলপরীসহ তাঁর বাবা ও মামাকে নিয়ে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর জয়শ্রী সেন একটি গাড়িতে করে ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর এলাকায় পৌঁছে দেন। সেখান থেকে তাঁরা পাবনার আটঘরিয়ায় গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা হন।
ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যমে অনেক দিন ধরে লেখালেখি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মুঈদ। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল তিনি বলেন, রাজনৈতিক আদর্শ থেকে চ্যুত হয়ে গেছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এ জন্য জাতীয় রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে সবার আগে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব ঘটনা আর ঘটবে না।