‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, ছবি প্রকাশ করতে পারেন’
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তার ছবি প্রকাশ করতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আপনারা নির্দ্বিধায় আমার ছবি প্রকাশ করতে পারেন’।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাবা ও মামাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন ফুলপরী। এ সময় তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
তদন্ত কমিটির কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দুপুরে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেন ফুলপরী। এরপর পাবনায় নিজেদের বাড়িতে চলে যান তিনি।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে যা যা হয়েছে, সব তদন্ত কমিটির কাছে বলেছি। তাঁরা খুব মনোযোগের সঙ্গে আমার বক্তব্য শুনেছেন। আমি আশা করছি, আমার সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে, তার বিচার পাব। ক্যাম্পাসে আমি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। তদন্তের প্রয়োজনে আবার আসব।’
এর আগে গতক ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরীকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ছাত্রী গত বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। এ জন্য তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক ছাত্রীর কাছে অতিথি হিসেবে থাকেন। বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, কারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী হাত তোলেন। হলে ওঠার বিষয়টি আগে তাবাসসুমকে না জানানোয় চটে যান তিনি। এরপর তাঁকে হলের কক্ষে (প্রজাপতি-২) দেখা করতে বলেন। তবে অসুস্থ থাকায় দেখা করেননি তিনি। ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাসে গেলে তাঁকে বকাঝকা করেন তাবাসসুম।
এদিকে ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত বিষয়ে কারোর নিকট কোনো তথ্য প্রমাণাদি থাকলে তা লিখিত আকারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির অফিসে জমা দিতে বলা হয়। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘সারাদিন ভুক্তভোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে যা যা করণীয় আমরা তাই করেছি। দুপুরে মেয়েটি তার পরিবারসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার আগে বক্তব্য প্রদান শেষে তিনি ও তার পরিবার নিরাপদে বাড়ি ফিরে গেছেন। তদন্ত কমিটির ব্যাপারে আইন প্রশাসন দেখবেন।