বেরোবির গ্রন্থাগারে যুক্ত হয়েছে নতুন ২৫০০ বই, বেড়েছে পাঠক
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে নতুন করে প্রায় দুই হাজার পাঁচশটি বই যুক্ত করা হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এই বইগুলোর ৬০% শিক্ষার্থীরা রুমে নিয়ে পড়তে পারবেন আর ৪০% বই লাইব্রেরীতে বসে পড়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি ই-বুকের সুবিধাও এখানে। সম্প্রীতি লাইব্রেরীর উত্তর পাশে বারান্দায় পড়ালেখার সুব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সবমিলিয়ে নতুন রূপে সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি।
গ্রন্থাগারে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং বাইরের মেসে পড়াশোনার পরিবেশ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির পড়াশুনার জন্য অনেকে গ্রন্থাগারকে বেছে নিচ্ছেন। সকাল হতে না হতেই এখানে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বদিচ্ছা ও লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় বেরোবির সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে বেড়েছে পাঠক সংখ্যা। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন গ্রন্থাগারে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের ভিড়ে, তাদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই গ্রন্থাগার। কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতায় লাইব্রেরীটি তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষের ও প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিল, লাইব্রেরির পাশে একটি উন্মুক্ত জায়গা করে দিয়ে যেন তাদের পড়াশুনার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দেয়া হয়। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদের যোগদানের পরপরই একাডেমিক শৃঙ্খলায় ফিরে পায় বেরোবি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সিদ্ধান্তে প্রধান্য দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
গ্রন্থাগারটিতে প্রবেশপথে প্রথমে ৮-৯ টি চেয়ারের একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা রয়েছে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন (আউট অফ সেট) নির্মাণ করেছে। উক্ত সেটে/ বারান্দায় দিনে ২৪ ঘণ্টা সাপ্তাহে ৭ দিন পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এখানে টেবিল, চেয়ার, লাইট, ফ্যান, এমনকি ল্যাপটপ চালানোর জন্য ইলেকট্রিক লাইনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ঘুরে দেখা গেছে, এতে বড় বড় ৪ টি রিডিং রুম রয়েছে। রিডিং রুম-১ এ সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, কলা অনুষদভুক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা বই। রিডিং রুম-২ এ রয়েছে গবেষক ও কর্মকর্তাদের জন্য বই রয়েছে। রিডিং হল-৩ এ রয়েছে বিজ্ঞান অনুষদ, জীব ভূ-বিজ্ঞান, প্রকৌশলী জন্যে বই। রিডিং হল-৪ এ রয়েছে নিউজ পেপার কর্ণার।
আরও পড়ুন: আলোর পথে নীরব পথ প্রদর্শক রাবিপ্রবির লাইব্রেরি
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে একটি জার্নাল কর্ণারও রয়েছে। সেখানে ২৮টি জাতীয় পত্রিকা রাখা হয়। এর মধ্য থেকে ১৪টি পত্রিকা আর্কাইভ সেকশন পত্রিকাগুলো সংরক্ষণ করা হয়। আর্কাইভ সেকশনে রাখা পত্রিকাগুলো ভবিষ্যতের যেকোনো দিন যেকোনো সময় শিক্ষার্থীরা পত্রিকাগুলো খুলে দেখতে পারেন।
গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখানের বইগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট চাহিদা অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হয়। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে প্রায় ১৪০০০ বই ছিল, আরো নতুন করে প্রায় ২৫০০ বই যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ই-বুকের সুবিধা রয়েছে এখানে। এখানে ৮টি প্রকাশনার প্রায় ৬৫০০ শিরোনামের বই রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে প্রত্যেকটি বইয়ে আন্তর্জাতিক কোড ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধা কর্ণার। এতে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই রয়েছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি দুই শিফটে পরিচালিত হয়। যা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কিন্তু লাইব্রেরির ভেতরে বাইর থেকে বই নেওয়ার কোন অনুমতি না থাকায় শিক্ষার্থীরা বাইরের কোন বই নিতে পারেন না।
লাইব্রেরিতে পড়তে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, যে সকল শিক্ষার্থী হলে বা মেসে থাকেন, তাদের মধ্যে অনেকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ছাউনির নিচে লেখাপড়া করেন। যারা হলে থাকেন তাদের অনেকে গাদাগাদি থাকেন। বা যারা মেসে থাকেন সেখানেও অনেকের পড়াশোনার পরিবেশ পাওয়া যায় না। তাই এ তারা পড়ার জন্য এই গ্রন্থাগারকে বেছে নেন।
পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, এখন লাইব্রেরী তার গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয় শিক্ষার্থীদের যে দীর্ঘদিন ধরে দাবি-দাওয়া ছিলো তাও অধিকাংশে পূরণ হয়েছে। আগে বই নিয়ে আসলে প্রবেশপথে বাধা ছিল। এর বিকল্প হিসেবে লাইবেরিয়ার বারান্দায় যে ছাউনী বসানো হয়েছে সেখানে ব্যক্তিগত বই নিয়ে পড়ার সুন্দর পরিবেশ রয়েছে।
অনেকটা অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-গ্রন্থাগারিক মো. মামদুদুর রহমান বলেন, লাইব্রেরীতে ডেস্কটপগুলো যে উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে সেগুলো কিন্তু সেই পারপাসের ব্যবহার করা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরির অনলাইন বুক বা জার্নালগুলো উপলব্ধি করতে পারে না।
এতে শিক্ষার্থীদেরও দায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, লাইব্রেরীতে জার্নাল ও বই মিলে মোট সাড়ে তিন হাজার টাইটেল রয়েছে। এমনকি নিজ বিভাগের ল্যাবের প্রতিটি কম্পিউটারে এক্সেস আইডির মাধ্যমে এসব বই পাওয়া যাবে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী এটা জানে না। এছাড়া শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরীমুখী করতে অনুপ্রাণিত করে না।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী গ্রন্থাগারিক প্রফেসর ড. মো. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান জানায়। শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কিছু করতে চাইলেও আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে সেটি করে উঠতে পারিনা। শিক্ষার্থীদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বই, চাকরি বই বা অন্য কোন বাইরের বই নিয়ে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো তাদের জন্যে যেন বাইরে পড়ার একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। আমার কাছে প্রস্তাবটি ভালোই লেগেছে। তাই আমি লাইব্রেরীর দিকে তিনদিকেই পড়ালেখা করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম, কিন্তু বাজেট কম থাকার কারণে এক পাশে এই ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে আরো দুই পাশের ছাউনির ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।