ফুটবল বিশ্বকাপ

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে পৌঁছে গেছে ফাইনালের জ্বর

বড় পর্দায় ঢাবিতে ফুটবল বিশ্বকাপের খেলা
বড় পর্দায় ঢাবিতে ফুটবল বিশ্বকাপের খেলা  © ফাইল ছবি

কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালের মাহন্দ্রেক্ষণের প্রহর গুনছেন বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় কাতারের দোহায় শুরু হতে যাচ্ছে ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনার মধ্যকার এবারের শেষ ম্যাচটি। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স চায় তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি নিজেদের কাছেই রাখতে। অন্যদিকে, দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাও তৃতীয়বারের মতো ট্রফি ছিনিয়ে নিতে আত্মবিশ্বাসী। 

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত এই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ব্যতিক্রম নয় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোও। বিশ্বকাপ ফাইনালের জ্বর পৌঁছে গেছে প্রতিটি ক্যাম্পাসে

বাংলাদেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকই ছিল বেশি। ব্রাজিল কোয়ার্টারে বাদ পড়াতে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছেন এবার বিশ্বকাপ নেবে মেসির আর্জেন্টিনাই। তবে অন্যদিকে শক্তিশালী ফ্রান্সকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 

বাংলাদেশে প্রতিটি অঞ্চলে ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়লেও সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কম যায়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও।

বিশ্বকাপের ছোঁয়াটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মনে একটু বেশিই লেগেছে। গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা দেখানো হয়েছে টিএসসি, ডাচ চত্বর ও মুহসীন হল মাঠে। আজকেও সেই উন্মাদনা ছড়িয়ে দিতে মুহসীন হল মাঠসহ ঢাবির তিনটি স্পটে এলসিডি মনিটরে খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে 'নগদ'। যার সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ফাইনাল খেলা শুরু হবার এখনো দুই ঘন্টা বাকি থাকলেও মাঠ ইতিমধ্যে পূর্ণ হতে শুরু করেছে। সুন্দর জায়গাগুলোর দখলে নিচ্ছেন আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। এর আগের আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের খেলাগুলোতে দেখা গিয়েছে দর্শকের ঢল। মুহসীন হল মাঠে প্রায় ৬-৭ হাজার দর্শক খেলা দেখেছে বলে একাধিক পোর্টালে খবর প্রকাশিত হয়েছিলো। ধারণা করা হচ্ছে আজকে শুধু মুহসীন হল মাঠে অন্তত ১০ হাজার ফুটবল প্রেমী খেলা উপভোগ করবেন।

এ সম্পর্কে আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আযহার উদ্দিন বলেন, একসময় গ্রামে সবাই মিলে খেলা দেখতাম। যেখানে একটা মাত্র টিভি থাকতো, কিন্তু অনেক দর্শক। একেক জনের একেক রকমের মতবাদ। হৈহল্লোরে ভরে থাকতো চারদিক। ঢাবির মুহসীন হল মাঠে খেলা দেখলে গ্রামের সেই অনূভুতি পাওয়া যায়। আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার, আমি চাই মেসির আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক।

অর্নব আশরাফ বলেন, মাঠে এত মানুষের সাথে একসাথে বসে খেলা দেখার আনন্দটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল মাঠে না আসলে কেউ বুঝতে পারবে না। মনে হয় আমরা যেনো ফুটবল মাঠের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতেছি। আমি আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করি, করে যাবো। আমি চাই আর্জেন্টিনা কাপ জিতুক। মেসি গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বল লাভ করুক।

ঢাবি শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসান আর্জেন্টিনার সমর্থক। তিনি জানান, ফাইনাল নামটা শুনলেই আমাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে। আমরা আর্জেন্টিনাকে বিগত ১০ বছরে তিন-চারটা ফাইনাল হারতে দেখছি। এবার টিমটা মোটামুটি শক্তিশালী। তাই একটু একটু ভয়ও লাগছে, আবার একটু একটু আত্মবিশ্বাসীও লাগছে। এবার ফাইনাল নিয়ে আমরা এবার আশাবাদী। 

জামালপুর থেকে ক্যাম্পাসে খেলা দেখতে আসা আর্জেন্টিনার সমর্থক রুবেল মেসি জানান, বিশ্বকাপ খেলা দেখার উদ্দেশ্যে জামালপুর থেকে এইমাত্র আসলাম। ২১ বছর ধরে অধ্যবসায় করছি মেসির হাতে বিশ্বকাপটা উঠুক। ২০১৪ জার্মানির সাথে হারছিলাম, তখন মনে বড় কষ্ট পাইছিলাম। আমরা এবার পূর্ণাঙ্গভাবে দাঁড়াইছি। এবার আমরা বিশ্বকাপ নিব।

আর্জেন্টিনার সমর্থক জুবায়ের কবির জানান, শিরোপার খুব কাছাকাছি রয়েছি আমরা। এবার মেসি বিশ্বকাপ জুড়ে যে পারফর্ম করেছে, তা অবিশ্বাস্য। আশা করছি, ফাইনালে এমবাপ্পের দল ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা এবার শিরোপার খরা ঘুচবে।

আরেক আর্জেন্টিনার সমর্থক জানান, শক্তি কিংবা ফর্ম, কোনো বিচারেই আলাদা করা সম্ভব নয় আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সকে। ফলে লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে সেটা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। আমি যেহেতু আর্জেন্টিনার সমর্থক। তাই আশা রাখছি, এবার মেসির হাতেই বিশ্বকাপ উঠবে।

এদিকে, ফাইনাল উপলক্ষে আজ দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য শুভেচ্ছা মিছিল বের করা হয়। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই জায়গায় মিলিত হয়। আনন্দ মিছিল শেষে প্রিয় দলের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাবের উপদেষ্টা ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, মেসির জীবনে অপূর্ণতা নেই, শুধু রয়েছে বিশ্বকাপ জেতার অপূর্ণতা। আজকে বিশ্বকাপ জিতে সেটাও পূর্ণ করবে। বাংলাদেশ থেকে প্রিয় দলের প্রতি যে পরিমাণ দোয়া আছে এই দোয়ার ফলে অবশ্যই আজকে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরে ফিরবে। প্রিয়দল আজ নতুন চমক দেখাবে বলে আশাবাদী এ সমর্থক। 

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ, হল ইউনিটের নেতাকর্মী, অনুষদ ও বিভাগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সকল সমর্থকরা এখানে উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্জেন্টিনা সমর্থকদের নিয়ে আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাব কমিটি গঠন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল-গালিব সভাপতি ও নাহিদুল ইসলাম নাহিদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে বিভিন্ন হল ও অনুষদের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের আনন্দ মিছিল প্রমাণ করে দেয় আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা। আমরা পরাজয় দিয়ে শুরু করেছিলাম শেষ জয়টা আমাদেরই হবে। যে দলে মেসি আছে সেখানে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। দলগত পারফর্ম করে আর্জেন্টিনাই কাপ নিবে বলে প্রত্যাশা এ সমর্থকের।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তিক বিশ্বাস বলেন, প্রিয় দল কয়েক বছর পর ফাইনালে গিয়েছে বিশ্বকাপ ছাড়া খালি হাতে সেখান থেকে ফিরবে না ইনশাআল্লাহ। মেসির পারফর্মেই কাতার বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার ঘরে উঠবে। আমরা ব্রাজিলের মতো হেক্সা হেক্সা করবো না। আমরা সেভেন আপ খাওয়া দল নয়। প্রতিটি বিশ্বকাপেই আমাদের পারফরম্যান্স ভালো। তারই ধারাবাহিকতায় কাতার বিশ্বকাপ আমাদের।


সর্বশেষ সংবাদ