মেরিট না থাকলে চাকরি দেব না: ছাত্রলীগকে কুবি ভিসি
মেরিট না থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেও ছাত্রলীগকে চাকরি দেবেন না বলে সতর্ক করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিভিন্ন নিয়োগ ইস্যুতে তার কার্যালয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এমন বার্তা দেন তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একাধিক ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষক জানান, আগামী ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলনে যেতে বাস চাইতে গিয়েছিলেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ছাত্রলীগের নিয়োগ ইস্যু নিয়ে কথা উঠলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এরপর উপাচার্য তার অনুসারী শিক্ষক, প্রক্টর ও কোষাধ্যক্ষকে কার্যালয়ে ডাকেন। তারা উপস্থিত হয়ে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াসকে বোঝাতে থাকেন।
জানা যায়, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইস্যু নিয়ে এদিন উপাচার্যের কার্যালয়ে কথা শুরু হয়। এসময় মার্কেটিং বিভাগের নির্দিষ্ট এক প্রার্থীর কথা উল্লেখ করেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। ওই প্রার্থী কুবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে উপাচার্যকে ইলিয়াস বলেন, ‘আপনি (উপাচার্য) নির্দিষ্ট প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে ‘অবৈধ’ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন, তাহলে ছাত্রলীগের ছেলেদেরকে চাকরি দিতে সমস্যা কোথায়?’ জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘সে (মার্কেটিং বিভাগের ওই প্রার্থী) কি ছাত্রলীগের না?’ জবাবে ইলিয়াস বলেন, ‘সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাথে সেভাবে জড়িত না। তবে তার পরিবার আওয়ামী লীগ।’
আরও পড়ুন: পাঁচ লাখ টাকা গবেষণা অনুদান পাচ্ছেন জবির ৩০ শিক্ষক
বাগ-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে উপাচার্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেও আমি ছাত্রলীগের কাউকে নিয়োগ দেব না। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতেই সকল নিয়োগ হবে।’ এসময় বিভিন্ন বিভাগে সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগ ও কর্মকর্তা পদে পরীক্ষা নিয়েও মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন না করার বিষয়েও উপাচার্যের সাথে ইলিয়াসের বাগ-বিতণ্ডা হয়। এ দফায় বাগবিতন্ডার পর উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান ইলিয়াস।
কিছুক্ষণ পর পুণরায় উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে আবারও বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে পাশে থাকা কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘ইলিয়াস, ভাইস চ্যন্সেলর চাইলে নিয়মনীতি করে যেকাউকে নিয়োগ দিতে পারেন। এতে তোমরা বলার কে? জবাবে উত্তেজিত হয়ে ইলিয়াস বলেন, ‘এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় বিএনপি। ছাত্রলীগ হলো নিষিদ্ধ সংগঠন। তারা ভেসে এসেছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্রলীগ নিয়োগ পাবে না।’
এ দফায় ইলিয়াস উপাচার্যকে বলেন, ‘আপনি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী বললেও আপনি কাউকে চাকরি দেবেন না? তখন উপাচার্য বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছি। আমার কথা ছিল, আমি চাকরি দেব মেরিটে। সেখানে যদি ছাত্রলীগের কেউ আসে, সে নিয়োগ পাবে। আমি কাউকে মুখ দেখে চাকরি দিতে আসিনি। জবাবদিহীতা-স্বচ্ছতা-ন্যায়নীতি এবং রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব, রাষ্ট্রের যে নির্দেশ, সেখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।’
এ বিষয়ে ইলিয়াস হোসেন সবুজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা ছাত্রলীগের সেন্ট্রাল সম্মেলন নিয়ে উপার্চায়ের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আামাদেরকে ওনার রুমে নিয়ে যান। এসময় সার্কুলার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, সে বিষয়ে আমি বলেছি, আপনি একাডেমিক কাউন্সিল থেকে পাশ করিয়ে নিতে পারতেন। এখানে সিলেক্টেড কিছু প্রার্থী আছে।
ইলিয়াস বলেন, তখন ওনি (ভিসি) ক্ষেপে গিয়ে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে বলেন, আমি ওদের নিয়োগ দেবো যদি তোমাদের ক্ষমতা থাকে তাহলে তোমাদের যা খুশি করতে পারো। তুমি মাঝে মাঝে ছাত্রলীগের কথা বল না? কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছাত্রলীগের নিয়োগ হবে না। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীও যদি বলে তাহলেও নিয়োগ দেব না, যদি আমার চাকরি চলে যায়, চলে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোনোদিন অযোগ্য লোকদের চাকরি দেয়ার জন্য আবদার করবেন না। আমি মেধা ছাড়া অন্যকোনো কন্ডিশনে চাকরি দেব না। কারো হুমকি-ধমকি, শাসানিতে চাকরি দেব না। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে নিয়মে, চলবে মেধাতে, সুষ্ঠু নিয়মে। ভালো ছাত্রছাত্রীদের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।