কুবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগ শিক্ষকদের একাংশের
আসন্ন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি'র নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ, কমিশন ও হিসাব নিরীক্ষণ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন থেকে দূরে থাকা শিক্ষকদের একটি পক্ষ। তবে শিক্ষক সমিতির বর্তমান কমিটির দাবি, গঠনতন্ত্র মেনে সবকিছু করার পরেও ভোটার বাড়াতে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে তারা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি গ্রুপ রয়েছে। যার একটির নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ. জাহিদ হাসান। অপরপক্ষটির নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি সাঈদুল আল আমীন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ. মুর্শেদ রায়হান। বর্তমানে শিক্ষক সমিতির সবকয়টি পদ সাঈদুল-মুর্শেদ পক্ষের দখলে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ৫ ডিসেম্বর শুরু ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা
গত ২৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু পরিষদের ওমর-জাহিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসন্ন নির্বাচনকে নিয়মনীতি লঙ্ঘন ও গঠনতন্ত্রবিরোধী উল্লেখ্য করে বলা হয়, কারা নির্বাচন কমিশনার হবেন সেসম্পর্কে কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি শিক্ষক সমিতি। বিগত ১০টি নির্বাচনের একটিও ১০ ডিসেম্বর এর আগে করা হয়নি। নিরীক্ষণ কমিটি গঠন ও বার্ষিক সভা আয়োজন না করেই গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এদিকে অভিযোগের জবাবে বঙ্গবন্ধু পরিষদের অপরপক্ষ ও শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ধারা ১০(ক) অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ ও ১০(খ) ধারা মোতাবেক নির্বাচন কমিশনার গঠন করা হয়েছে। ১০ জন শিক্ষকের সাথে কথা বলে নির্বাচন করবেন না অথচ নির্বাচন কমিশনার হতে আগ্রহী এমন ৩ জন শিক্ষককে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হিসাব নিরীক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং অন্যান্য বছরের ন্যায় বার্ষিক সভায় কোষাধ্যক্ষ তা প্রকাশ করবেন।
শিক্ষক সমিতির নেতারা বলছেন, গত ১৯ মে অনলাইনে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন’কে নিয়ে নিরীক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়।
যদিও নিরীক্ষণ কমিটি গঠনের বিষয়ে কিছুই জানেন বলে জানান ওমর-জাহিদ পরিষদ।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী পন্থী দুটি পক্ষের ভোটার সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। তবে অল্প কিছু ভোটে পিছিয়ে রয়েছে ওমর-জাহিদ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষক নিয়োগের একটি সার্কুলার দিয়েছে প্রশাসন। নতুন শিক্ষক যোগদানের পরে যদি নির্বাচনের আয়োজন করা হয় তাহলে ভোটে সমতা আসতে পারে। একারণেই অংশ না নিয়ে নির্বাচন পেছানোর পায়তারা করছে পক্ষটি, এমনকি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাঈদুল-মুর্শেদ পরিষদের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নির্বাচনে পেরে উঠতে পারবে না এই ভয়ে তারা নির্বাচনে আসতে চাচ্ছেন না। যদি নির্বাচন কোনোভাবে তারা পেছাতে পারেন ও ১৫ তারিখের আগে সিন্ডিকেট বসে তাহলে নতুন ১২ জন ভোটার বাড়বে। আর একারণেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এদিকে ভোটার বাড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করে কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা চেয়েছি সাধারণ সভা করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। সাধারণ সভা করলে আমরা মতামতের মাধ্যমে নির্বাচনের দিন তারিখ ও নির্বাচন কমিশনার গঠন করতে পারতাম। আর ভোটার বাড়বে কি কমবে এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলতে পারবে। আমি শিক্ষক হিসেবে বলতে পারি না।
তবে শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রে নির্বাচন সংক্রান্ত ১০(ক) ধারায় বলা আছে, কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন প্রতিবছরের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। কমিশন গঠন নিয়ে ১০(খ) ধারায় বলা হয়, ১৫ থেকে ৩১ নভেম্বরের মধ্যে কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। হিসাব নিরীক্ষণের বিষয়ে ১৬ ধারায় বলা হয়, সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মনোনীত ২জন সাধারণ সদস্য সমিতির হিসাবপত্র নিরীক্ষণ করবেন। পরীক্ষিত হিসাবপত্র কার্যকরী পরিষদ কর্তৃক বিবেচিত এবং অনুমোদিত হবার পর সমিতির বার্ষিক সভায় তা পেশ করতে হবে।
তবে নির্বাচন প্র্যাকটিসের বিষয়ে উল্লেখ করে ওমর সিদ্দিকী বলেন, "প্রতিবছর যে প্র্যাকটিসটা করা হতো সেটা এবার হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে আমাদের অবহিত করা হয়নি। আমি নিজেও নির্বাচন না করতে পারি। নির্বাচনের তারিখ কার্যনির্বাহী পরিষদে সিদ্ধান্ত হলেও আমরা সাধারণ সভায় আলোচনা করে তারিখ ঠিক করতাম। আর নিরীক্ষণ কমিটি কবে গঠন করা হয়েছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।"
এদিকে ওমর-জাহিদ পরিষদের অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, "গঠনতন্ত্রের কোথাও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে কিছু বলা নেই। নির্বাহী সভায় প্রস্তাবিত কয়েকজন শিক্ষককে ফোন দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে তারা নির্বাচন করবে কিনা। যারা নির্বাচন করবে না বলেছে, তাদের মধ্য থেকে আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি।"