গুচ্ছ প্রক্রিয়ার বেড়াজালে স্বপ্নভঙ্গ এবার রাবি শিক্ষার্থীর
চান্স পেয়েও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ার কঠোর নিয়মের প্যাঁচে পড়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পথে অনন্য (ছদ্মনাম) নামে এক ভর্তিচ্ছু। এই শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ সেশনের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ভর্তি বাতিল করে গুচ্ছভুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জে একাউন্টিং বিভাগের ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। তিনি রাবিতে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ইতোমধ্যে একবছর পড়াশোনা করেছেন এবং তিনি নতুন সেশনে ভর্তি হতে না পারলে তার প্রায় আড়াই বছরের একাডেমিক ইয়ার লস হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওই শিক্ষার্থী জানান, নিজের ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিয়ে প্যাশন হিসেবে ইউনিভার্সিটির শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চেয়েছিলাম, সেই সাথে হতে চেয়েছিল নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচের ১ম শিক্ষার্থীও।
এর আগে শাওন চৌধুরী নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিষয়ে ভর্তি বাতিল করে গুচ্ছভুক্ত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। একই প্যাঁচে পড়ে তিনিও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার বেড়াজালে স্বপ্নভঙ্গ ঢাবিতে সুযোগ পাওয়া শাওনের
তথ্যমতে, গতকাল রবিবার (১৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জে (বিএসএমআরইউ) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ‘সি’ ইউনিটে ভর্তি হতে এসে জিএসটি ভর্তি প্রক্রিয়ায় মারপ্যাঁচের শিকার হন তিনি। সার্টিফিকেট জমা ছাড়া ভর্তি না নেওয়ার নিয়মের বেড়াজালে এই শিক্ষার্থীকে ভর্তি না নিয়েই ফিরতে হয়েছে বিএসএমআরইউ থেকে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বিএসএমআরইউ’র ‘সি’ ইউনিটে তার মেরিট পজিশন ২য় এবং সেই অনুযায়ী গত ৭ নভেম্বর প্রাথমিক ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা পেমেন্টও করেছেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো মার্কশিট জমা নিয়ে। রাজশাহী থেকে মার্কশিট উত্তোলন নিয়ে তাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হলো৷ ৩ তারিখের পর থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত মানসিকভাবে হয়রানির পরও মার্কশিট তোলা গেল না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহী থেকে গাড়িতে উঠে কিশোরগঞ্জে প্রক্টর স্যারকে মার্কশিট হাতে পাওয়ার বিষয়টি জানালে, তিনি বলেন সময়তো কালকে শেষ হয়ে গেছে, তবুও দেখি কি করা যায়। তারপর ওনাকে ১৩ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাকে ডকুমেন্ট জমা নেওয়ার কথা বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। একদিকে আমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল প্রক্রিয়া চলমান, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাতিল হয়ে গেল।
আরও পড়ুন: ধূমপানই করেনি, ছেলের মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন আসে না: বুয়েটে ফারদিনের বাবা
তাহলে দেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কী কল্পনাতেই রয়ে যাবে এমন প্রশ্ন নিয়ে ভূক্তভোগী এই শিক্ষার্থী জানান, রাজশাহীর ভর্তি বাতিল প্রক্রিয়ায় ৫-৭ দিন হয়রানি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমআরইউ) ভিসি ও প্রক্টরের মিথ্যা আশ্বাস কিংবা পজেটিভলি হেল্প না পাওয়া। আমার স্বপ্নভঙ্গ, করোনার ২ বছর পিছিয়ে পড়া এবং আর্থিক ক্ষতি। গুচ্ছের হেল্পলাইনে রেসপন্স না পাওয়া এবং জটিলতার কারণে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের ভুগতে হয় এর দায় আসলে কারা নেবে?
এ বিষয়ে গুচ্ছভুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জে’র উপাচার্য পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, এর দায় সম্পূর্ণ ওই শিক্ষার্থীর। আমরা গুচ্ছের নির্ধারিত নিয়মে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করি। আমরা চাইলেও নিয়মের বাইরে যেতে পারি না। সকল কাজই সার্ভার (অনলাইনে) করতে হয়। সার্ভারের বাইরে গিয়ে আমাদের কোন কাজ করা বা ভর্তি করার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন জানান, ওই শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করলে এ বিষয়ে তো আমাদের আর কিছু করার নেই। তবে, সম্পূর্ণভাবে ভর্তি বাতিল করে কাগজ নিয়ে অনলাইন বা সার্ভার থেকে বাদ দেয়া হলে তার আর রাবিতে থাকার কোনা সুযোগ থাকবে না।
পাশাপাশি এই অধ্যাপক শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে ভর্তির জন্য সকল কাগজপত্র না তুলে বা ভর্তি সম্পূর্ণ বাতিল না করতে। একটি প্রত্যয়নপত্র নিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ করে ভর্তি বাতিল করার।