বাইরে বের হলেই ইডেন ছাত্রীদের দিকে ধেয়ে আসছে তির্যক মন্তব্য
ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ইউনিটটির কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোসহ ব্যাপক অভিযোগ করেছেন বিরোধী পক্ষেরই আরেক নেতা। এসব ঘটনায় ১৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। হয়েছে পাল্টাপাল্টি মামলাও। তবে এসব ছাপিয়ে ভুক্তভোগী এখন কলেজটির সাধারণ ছাত্রীরা। তারা জানিয়েছেন, এসব ঘটনার পর তারা ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে পারছেন না।
ছাত্রীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে সামান্য কয়েকজন নেত্রীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। সর্বশেষ ইডেন কলেজের ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে ছাত্রীরা নিজেদের পরিচয় নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছেন। একইসঙ্গে তাদের মাঝে পরিচয় সংকটও দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চরম ক্ষুব্ধ তারা। ভুক্তভোগী হলেও ছাত্রলীগ নেত্রী ও প্রশাসনের ভয়ে তাদের অনেকেই মুখ খুলতে চান না।
ইডেন কলেজছাত্রী লুৎফুন্নাহার ফুরকান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগের দুপক্ষ নিজেদের ক্ষমতার জন্য যে সংঘর্ষে নেমেছে তা আশঙ্কাজনক। কিন্তু উনাদের দুপক্ষের সংঘর্ষের জন্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের একপক্ষ যে সকল মন্তব্য করছেন তার কতটা ভিত্তি আছে সেটাও আমাদের জানা নেই।
আরও পড়ুন: ইডেনে সিট বাণিজ্যে: কোটি টাকা পকেটে ভরছে ছাত্রলীগ!
ফুরকান বলেন, ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে আমি ইডেনে আছি। আজ পর্যন্ত আমি এইসব কথা শুনিনি এবং কাউকে এর সম্মুখীন হতেও দেখিনি। এই একটা মন্তব্যের কারণে আমরা এখন ক্যাম্পাসের বাইরে বের হতে পারছি না। সবার একই কথা ইডেনের মেয়েরা ভাল না। বাইরে বের হলেই আমাদের দিকে মানুষের তির্যক মন্তব্য ধেয়ে আসছে। আমরা কেন এইসব কথা শুনবো?
সর্বশেষ ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস। দুপক্ষের উত্তেজনার মধ্যেই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক রিভা ও রাজিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেন, বৈধ রুমের মেয়েরা উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করার সময় সভাপতির (তামান্না জেসমিন রিভা) অনুসারীরা তাদের ছবি তুলে রাখেন। পরে সেখান থেকে সুন্দরীদের বাছাই করেন। এরপরে বাছাইকৃত মেয়েদের রুমে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে খারাপ উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন ধরনের কু-প্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ, তারা ওই মেয়েদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করাতে চান।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ ইডেন কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে: ছাত্রদল
এরপর কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্রী নুসরাত জাহান কেয়াও ছাত্রলীগের বিরুেদ্ধে সিট বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে ব্যাপক অভিযোগ করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইডেন কলেজের সব ছাত্রী তো খারাপ না। পুরো কলেজে হাতে গুনে খারাপ পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ জন। অথচ এদের জন্য ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর বদনাম। আমরা কোথাও মুখ দেখাতে পারি না। এদের সামাজিক জীবন ব্যহত হচ্ছে। বিয়েতেও এর প্রভাব পড়বে।
এরপর থেকেই মূলত ফেসবুক এবং ফেসবুকের বাইরেও ইডেন কলেজ ছাত্রীদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার বলেন, কলেজের ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ফলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন ভুক্তভোগী। আমরা রাস্তায় বের হতে পারি না। মানুষ আমাদেরকে নিয়ে নানান ধরনের বাজে মন্তব্য করে। আমরা এখন নিজেদের ইডেন কলেজের ছাত্রীও পরিচয় দিতে পারি না। পাড়াপড়শিদের কাছ থেকে আমাদের বিভিন্ন ধরনের কথা শুনতে হচ্ছে। উনাদের একটাই কথা কেনো ইডেন কলেজে ভর্তি হলাম!
ইডেন কলেজের ছাত্রী সাদিয়া বলেন, ইডেন মহিলা কলেজ এখন পুরো দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত। ছাত্রলীগের দুপক্ষের রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে এবং তাদের প্রতিহিংসার জন্য ইডেনের সমগ্র ছাত্রীদের নিয়ে অকথ্য মন্তব্যে মেতেছে জনগণ। আমরা এখন সোস্যাল মিডিয়ায় ঢুকতে পারি না। সবখানে শুধু একটাই নিউজ ইডেন কলেজের মেয়েরা খারাপ। অথচ বেশিরভাগ ছাত্রীরা আমরা রাজনীতির সাথে একবারেই যুক্ত না।
জানতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, আমি যদি ভুল করি, তাহলে সংগঠন আমার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। অন্য কেউ ভুল করলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। আমি সংগঠনের সব সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
সরকারি কলেজগুলোতে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তিলোত্তমা সিকদার বলেন, যে অভিযোগগুলো আসছে, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছে সেগুলোর বেশিরভাগই ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে। এমন বেশকিছু অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত করে সত্যতা পাইনি। সাম্প্রতিক সময়ে ইডেন কলেজের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি।
ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসাকে বলেন, ছাত্রীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তাদের পড়ালেখায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিৎ। কলেজের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।