অতিরিক্ত ক্লাসের চাপে ব্যাহত হচ্ছে বেরোবি শিক্ষকদের গবেষণা
- বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২২, ০৭:১৭ PM , আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৪৩ PM
উত্তরবঙ্গের শিক্ষা দর্পণ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে অতিরিক্ত ক্লাসের চাপে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রম। বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক সংকট চরমে।বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। সেখানে সাড়ে ৯ হাজার জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ১৮২জন। অর্থাৎ প্রতি ৫২জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছে। অথচ ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা।ফলশ্রুতিতে গড়ে একজন শিক্ষককেই নিতে হচ্ছে ৯-১০টি কোর্স। অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষার চাপে গবেষণা কার্যক্রমে যথেষ্ট সময় দিতেন পারছেন না শিক্ষকরা। শিক্ষক স্বল্পতায় কার্যত ঝিমিয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর সূত্র জানা গেছে, ১৮২জন শিক্ষকের মধ্যে ২৬জন শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে এবং ৩জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ার অভিমুখে রয়েছে। বাকি ১৫৩-১৫৬ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। এতে বিভাগ প্রতি গড়ে মাত্র ৭ শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে লোকপ্রশাসন বিভাগের নাজুক অবস্থা। তাদের মাত্র ৩জন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান।
আরও পড়ুন: এবছর এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি : শিক্ষামন্ত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে পাঁচটি ব্যাচ থাকার কথা থাকলেও ছয়টি অনুষদের ২২টি বিভাগের অধিকাংশ বিভাগে রয়েছে ছয় থেকে সাতটি ব্যাচ। ফলে চার বছরের স্নাতক এবং এক বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স শেষ করতে সময় লেগে গেছে ৬-৭ বছর। যদিও বর্তমান উপাচার্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাধ্যমে সেশন জট অনেকটা কমিয়ে এনেছেন ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, চার বছর মেয়াদের আট সেমিস্টারের স্নাতকে পড়ানো হচ্ছে ন্যূনতম ৪৮টি কোর্স এবং এক বছর মেয়াদের দুই সেমিস্টারের স্নাতকোত্তরে পড়ানো হয় ন্যূনতম ১২-১৪টি কোর্স। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় এক শিক্ষককে নিতে হচ্ছে ৯-১০টি কোর্স। কিছু বিভাগে তারও বেশি।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম বলেন, শিক্ষক সংকটের জন্য প্রধানত একাডেমিক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকদের যেমন ব্যক্তিগত গবেষণার জায়গা থাকে, তাদের নিজেদের পড়াশোনার জায়গা থাকে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সেশন জটের বিষয়টা উপাচার্যের নেতৃত্বে এবং আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কমিয়ে এনেছি কিন্তু গবেষণা ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা এখনও রয়েই গেছে ।
তিনি আরও জানান, এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত চার বছর শিক্ষকদের কোন পদ চাওয়া হয়নি। ফলে বর্তমান উপাচার্যের উপর এর প্রভাব পড়েছে। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যার ফলশ্রুতিতে আমরা পদ পাচ্ছিনা। অতীতে যদি পদ চাওয়া হতো তাহলে শিক্ষকদের সংকট এখন অনেকটা কমে যেত। এখন আমাদের ১৮৩ জন শিক্ষক রয়েছে এর মধ্যে চারজন শিক্ষকের কোন স্থায়ী পদ নেই। তারা শিক্ষাজনিত পদের বিপরীতে আছেন। তাদের পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা বড় প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে কাজ করছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোঃ শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে নবীন শিক্ষকরা ভালো মানের গবেষণা করতে পারছেন না। ডিগ্রি অর্জনের জন্য তারা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও পূর্ণ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, প্রশাসন ইউজিসির সঙ্গে নতুন শিক্ষকের পদ পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন। পদ পেলে জুনিয়র শিক্ষকরা শিক্ষা এবং গবেষণায় সময় দিতে পারবেন।
এব্যাপারে ছাত্র উপদেষ্টা মোঃ নুরুজ্জামান খান জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষকদের ক্লাস পরীক্ষা নিতে প্রচুর পরিমাণ চাপ যাচ্ছে এবং এর ফলে তারা গবেষণা কাজে কোন সময় দিতে পারছেনা। যদিও এই পরিমাণ শিক্ষক নিয়েই উপাচার্যের নেতৃত্বে আমরা সেশনজট কমাতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, গত চার বছরে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ইউজিসি থেকে একটি পোস্টও নিয়ে আসতে পারেননি এবং তিনি যে ৪৮জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন সবগুলো ছিল শিক্ষা ছুটির বিপরীতে। আর প্রথমের দিকে যে ১২ জনকে স্থায়ী নিয়োগ দেন সেই পোস্টগুলো নূরনবী স্যারের সময়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে নতুন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইউজিসি ও মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী দুই/এক মাসের মধ্যে কিছু সংখ্যক পোস্ট আসবে।
রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর কবির বলেন, ৪মাসের মধ্যে কোর্স কমপ্লিট করতে বন্ধের দিন শুক্র-শনিবারেও শিক্ষকদের নিতে হচ্ছে একাধিক ক্লাস। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছুটির দিনেও পরিবার পরিজনকে সময় দিতে পারছেন না। যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন না গবেষণা কার্যক্রমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও জানান, শিক্ষক সংকট নিরসনের জন্য মাননীয় উপাচার্য যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। ইউজিসি থেকে পোস্টের ক্লিয়ারেন্স পেলে ২-৩ মাসের মধ্যে ৭-১০ জন শিক্ষক প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হবে।
গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক ড. মো: তানজিউল ইসলাম (জীবন) বলেন, শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি সকল শিক্ষক ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে শত কষ্ট করে হলেও গবেষণা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করে চলেছেন। কারণ ২০২০-২০২১ সেশনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজে ৮০ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেছিল যার বর্তমান সংখ্যা ৯৯জন।
তিনি আরও জানান, উপাচার্য করোনাকালীন ছুটির ঘাটতি পূরণের জন্য আমাদের ৬ মাসের কোর্স ৪ মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেন এবং তিনি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট মুক্ত হবে বলে ঘোষণা করেন।