একা লাগলে ইডেনের পুকুর পাড়ে বসি, হেডফোনে গান শুনি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস বলতে শুধুমাত্র প্রাঙ্গনকে বোঝায় না, শিক্ষাঙ্গনের ক্যাম্পাস এমন এক অনুভূতি যাকে কোন শব্দ দিয়েও সংজ্ঞায়িত করা যায় না। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা একটু একটু করে ক্যাম্পাসের গল্পে নতুনত্ব যোগ করে করেন। ইডেন সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীরা যেন এ ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়কে প্রতিদিন নতুন করে আবিষ্কার করেন। যেখানে তারা শান্তি খুঁজে পান।
কলেজটির ছাত্রীরা ভাষ্যমতে, মধ্য দুপুরে ক্লাস শেষে ক্লান্ত শরীরে যখন বন্ধুরা মিলে পুকুর পাড়ে আড্ডা দিতে যাই, তখনি মনে হয় আমাদের সব দুঃখ কষ্ট এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। আমাদের কাছে পুকুর পাড় মানেই অন্যরকম প্রশান্তির এক স্থান।
আরও পড়ুন: ইডেন কলেজ: এক বছরে ৪ ছাত্রীর বিদায়
যেখানে বন্ধুরা মিলে সেই মোজাইক করা বিশাল বড় ঘাটে গিয়ে বসি আর নানান ধরনের গল্প, গান গাওয়া, ছবি তোলা, পুকুরের পানিতে বসে পা দোলানো, মজা করা, বন্ধুদের গায়ে পানি ছিটানো। আর সঙ্গে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাওয়া সেই এক অন্য রকম অনুভূতি। এই যেন সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি।
ইডেন কলেজের ছাত্রীরা জানান, পুকুরটির দুই পাশে রয়েছে ফুলের বাগান এবং রয়েছে বাহারি রকমের ফুলের গাছ। ফুলের সুবাসে যেন মন ছুঁয়ে যায় আমাদের। আরো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ, যেমন- আম, জাম, নারকেল, পেয়ারা ইত্যাদি গাছে ঘেরাও করা পুকুরের চার পাশে।
মাস্টার্স অধ্যায়নরত ইতিহাস বিভাগের নুসরাত জাহান লাবনী বলেন, ইডেন কলেজের পুকুর পাড় আর ভেতরের পরিবেশটা আমার বরাবরই ভালো লাগে। আমি যতবার দেখি ততবারই এই সবকিছুর প্রেমে পড়ি। চারপাশে এতো সবুজে ভরা, নানান রঙের ফুল এবং ফলের গাছ আমাকে মুগ্ধ করে। যখন আমি এই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবো, তখন এতো সুন্দর প্রকৃতিকে আমি অনেক বেশি মিস করবো।
কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দীপ্তি দাস বলেন, আমার ক্যাম্পাস, আমার স্বর্গ। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে চেনা যে জায়গায় নিজের চিন্তাগুলো নিশ্চিন্তে যাপন করি সেটি হলো এই পুকুর পাড়। যখন নিজেকে প্রচন্ড একা লাগত ঠিক তখনি পুকুর পাড়ের বেঞ্চটিতে বসে বসে হেডফোনে নিজের প্রিয় গানটি ছেড়ে দিতাম। কত সময় পার করেছি এভাবে। বন্ধুরা মিলেও গানে, গল্পে দারুণ আড্ডায় মেতে উঠেছি।
তিনি বলেন, আমার প্রিয় ক্যাম্পাস, একেকটা ঋতুতে তার রূপ একেক রকমভাবে রঙ বদলায়। গ্রীষ্মকালে যখন কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলে পুরো ক্যাম্পাসটি ছেয়ে যায়, আমি বারবার তার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে যাই। যদিও সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটি আর নেই। এছাড়াও পূর্ণ শীতে যখন শূন্য ডালপালা নিঃস্ব হয়ে থাকে, ক্যাম্পাসের আঙিনাগুলো তখন ফাঁকা লাগে। ঠিক তখনি পুকুর পাড়ে আমাদের ঠাই মিলে।
দীপ্তির ভাষায় ‘‘ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ই শুধু নয়, ক্যাম্পাসের পুরো জায়গাটা আমাদের কাছে স্বর্গ। এই প্রিয় ইডেন ক্যাম্পাস আর পুকুর পাড় আমাদের সবার কাছে একটি পরিবারের মতো, যেখানে আমরা নির্দ্বিধায় সবকিছু করতে পারি।’’