৭৩ বছরেও একটি বাসের মালিক হতে পারেনি সোহরাওয়ার্দী কলেজ
সরকারি সাত কলেজের ছয়টি ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য নিজস্ব বাস থাকলেও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে যাতায়াতের জন্য কোন বাস নাই। প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পরও একটি বাসের মালিক হতে পারেনি কলেজটি। এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সব মিলিয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৭০০০ হাজার। নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত হয়রানি ও দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে কলেজ প্রশাসন বলছে বাস রাখার জায়গা সংকটের কারণে নিজস্ব পরিহন চালু করতে পারছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর যার অবস্থান পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল কায়েদ-ই- আজম কলেজ যা বর্তমানে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
সাত কলেজের বাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায় তাহলে দেখা যায়, প্রথমে আছে তিতুমীর কলেজ ৯টি, দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা কলেজ ৮ টি, তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজ ৪ টি , চতুর্থ অবস্থানে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ২ টি এবং সর্বশেষ বাঙলা কলেজ ১ টি।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজে বাস না থাকায় যাতায়াতের জন্য চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্র- ছাত্রীরা ক্লাস করতে এসে চরম দূর্ভোগের শিকার ।
দূর্ভোগের শিকার জোবাইদা আমান লিজা জানান, আমি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে নিয়মিত ক্লাস করতে আসি। সকালে আমি বাসা থেকে অটো রিক্সা করে নদীর ঘাট পর্যন্ত যাই। তারপর নদী পার হয়ে সেখান থেকে একটা বাসে করে নতুন বাজার যাই। পরে নতুন বাজার থেকে বাসে করে সদরঘাট যাই। আবার সেখান থেকে হেঁটে কলেজ পর্যন্ত আসি। এতে আমার যাতায়াত করতে খুবই সমস্যা হয়, আসা যাওয়া মিলিয়ে প্রতিদিন ৬-৭ ঘন্টা ব্যায় হয়। ক্লাস করার জন্য সকাল ৬টায় বের হই এবং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরতে রাত ৮টা বেজে যায়। আমাদের কলেজের নিজস্ব বাস থাকলে এত কষ্ট হতো না। আমাদের যাতায়াত অনেক সহজ হতো।
আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বে সোহেল-আরিফ
গাজীপুর থেকে আসা এক শিক্ষার্থী জানান, অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের মধ্যে আমাদের কলেজ সব দিক থেকে অবহেলিত। বাকি ছয়টি কলেজ বাস থাকলেও আমাদের কলেজে নাই। বাস না থাকায় প্রতিদিন ক্লাস করতে পারি না। একদিন ক্লাস করতে আসলে বাসায় গিয়ে খুবই ক্লান্ত হয়ে যায়। আসা-যাওয়া করতে যানজটের জন্য অনেক সময় লেগে যায়।
সাভার থেকে ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থী ফিওনা এষা সরকার জানান, বাস চালকরা হাফ ভাড়া নিতে চায় না স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখালেও দুর্ব্যবহার করে। নারী শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে বাসে নিতেও আপত্তি করে। কখনও দাঁড়িয়ে কিংবা ঠেলাঠেলি করে আসতে হয়। অনেক সময় ঠিক জায়গায় নামাতেও ঝামেলা করে। প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে প্রায় সময় লাগে ৭-৮ ঘন্টা।
ক্যাম্পাসের আরও অনেক শিক্ষার্থী জানান, আমরা অনেকেই উত্তরা, খিলগাঁও, বাড্ডা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর থেকে যাতায়াত করি। ক্যাম্পাসের নিজস্ব বাস না থাকায় রাস্তায় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে রাস্তায় যানযটের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। এমনও দিন গেছে কেউ কেউ সকাল ৯ টার ক্লাস করার জন্য সকাল ৬ টায় বাসা থেকে বের হয়েও ক্লাসে এসে দেখে ক্লাস শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে হাফ ভাড়া নিয়ে বাস হেলপারদের সাথে তর্ক-বির্তকে জড়াতে হয়। আবার অপমান, লাঞ্ছনারও শিকার হতে হয়। কলেজ নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা চালু করলে আমরা এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবো। তাই অতিদ্রুত কলেজের নিজস্ব বাস চালু করার দাবি জানাই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোহসিন কবির বলেন, দেশের প্রতিটা কলেজেই কি বাস আছে? অবশ্যই বাস নাই। আর আমাদের সকল সমস্যার মূলে জায়গার সংকট। ক্যাম্পাসে যদি ২টি বাস আনা হয় তাহলে ২জন চালক, ২ জন হেল্পপার লাগবে। গাড়ি রাখার জন্য একটি গ্যারেজ তৈরী করতে হবে। কিন্তু এখানে গ্যারেজ তৈরী কারার মত কোন জায়গা নাই। ক্যাম্পাসে বাস আনলে হয়তো ৩০শতাংশ শিক্ষার্থীর যাতায়াত কাভার হবে কিন্তু বাকি ৭০ শতাংশ কীভাবে কাভার হবে?
তিনি আরও বলেন, ২টি বাস আপনি কোন রুট রেখে কোন রুটে চলাচল করাবেন। বাস আনলে ছাত্র- ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেওয়া লাগবে। অনেকেই ক্যাম্পাসের আশেপাশের মেসে থাকে তারা বলবে আমরা তো বাসে চড়ি না, তাহলে আমরা কেন চাঁদা দিব। এসব দিকও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। আর আমাদের আগে জায়গার সংকট নিরসন করতে হবে। এই জায়গার সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।