নাম পাল্টে সান্ধ্যকালীন কোর্স চলে কুবিতে, খোদ উপাচার্যই নেন ক্লাস
সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা থাকলেও সেটির নাম পাল্টে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নেওয়া হচ্ছে সপ্তাহান্ত (উইকেন্ড) কোর্স। যেখানে খোদ উপাচার্যই ক্লাস নেওয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে। অভিযোগ উঠেছে ইউজিসির নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং নিজেই ক্লাস নিয়ে নামে-বেনামে এইসকল প্রোগ্রামকে উৎসাহিত করছেন উপাচার্য।
উপাচার্যের এমন কর্মকাণ্ডে সুযোগ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন নামে সপ্তাহান্ত (উইকেন্ড) কোর্স চলমান রেখেছে। এরমধ্যে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের একটি ব্যাচের ক্লাস নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন।
এদিকে গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধনের জন্য কতৃপক্ষ শিক্ষা কার্যক্রমের সময়সূচি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এবং বৃহস্পতিবার সকল ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। একইভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সময় সকাল ৯টা থেকে ৫টার পরিবর্তে ৪টা পর্যন্ত চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু উইকেন্ড প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি।
উইকেন্ড প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে এমন বিভাগগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মার্কেটিং, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং এবং একাউন্টিং বিভাগে চলছে উইকেন্ড কোর্স। এছাড়াও কলা ও মানবিক অনুষদের ইংরেজী বিভাগ এবং প্রকৌশল অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। একাউন্টিং বিভাগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত, শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা এবং ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রোগ্রাম চলমান থাকে। এমনকি সবগুলো বিভাগেই সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা ও সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সিডিউলে ক্লাস নেয়া হয়। মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনার আগে যা সান্ধ্যকালীন কোর্স নামে পরিচিত ছিল।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সান্ধ্য কোর্স পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ক্ষুন্ন করে বিধায় এই কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি। নির্দেশনার আলোকে ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের ঘোষণা দেয়।
কিন্তু সান্ধ্যকালীন (ইভিনিং) কোর্সের নাম পাল্টে সপ্তাহান্ত (উইকেন্ড) নামে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের চারটি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে উল্লেখ করে ১৩ ও ১৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যা এখনো উইকেন্ড প্রোগ্রাম নামেই চলমান রয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সংযুক্তি ইউজিসির নির্দেশনার পরিপন্থী এবং এর মাধ্যমে উপাচার্য উইকেন্ড প্রোগ্রামকে প্রণোদনা দিচ্ছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওই বিভাগের উইকেন্ড ১৮তম ব্যাচের MGT-507 কোডের Entrepreneurship Development নামে একটি কোর্সের শুক্রবার তিনঘন্টা ক্লাস নেন উপাচার্য। যেখানে পুরো কোর্সে তার সম্মানী ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। এরমধ্যে সেমিস্টারের প্রশ্নে ২ হাজার টাকা, দুইটি মিডের জন্য ১৫ শত টাকা, প্রতিটি মিড টার্মের উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য ৪০ টাকা, প্রতিটি সেমিস্টার খাতার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য ১০০ টাকা, প্রতিটি টার্ম পেপারের জন্য ৪০ টাকা এবং প্রতি কোর্সের কুইজ বা এসাইনমেন্টের জন্য ২ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আবার ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্স পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে ১৮ হাজার টাকা ও ৮ হাজার টাকা এবং কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের কমিটির প্রধান হিসেবে ১০ হাজার টাকা সম্মানী পান।
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। আমি কোন মতামত দিব না। আমি তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ কেউ না। আমি একটা বিভাগের প্রধান আমার মতামতের কোন গুরুত্ব আছে বলে মনে করি না।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, উইকেন্ড আমি আসার আগে থেকে চলে। সুতরাং আগের প্রশাসনকে জিজ্ঞেস কর।
তবে একজন উপাচার্য হয়ে এমন প্রোগ্রামে ক্লাস নিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা (বিভাগ) আমাকে জোর করে ক্লাস দিচ্ছে। এখানে তো কোন অসুবিধা নেই। আর আমি ক্লাস নিচ্ছি ছাত্রদের সাথে কমিউনিকেশন বাড়ানোর জন্য। এক্ষেত্রে ইউজিসি যদি আমাকে কিছু জানায় সেটার উত্তর আমি দিব তোমাকে কিছু বলতে চাই না। আমার আর কোন কথা বলার নেই।
সম্মানীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্মানী আমাকে দিলে আমি কি করবো। পরে তিনি প্রতিবেদককে বলেন তোমার সাথে আমি আর কথা বলতে পারবো না তোমার অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য দিল আফরোজা বেগম বলেন, সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করার জন্য হাইকোর্টে রিট দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে এর সুনানি হবে। তারপর আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিব। সান্ধ্যকালীন কোর্সে উপাচার্য ক্লাস নেন এমন নজির আমি আগে দেখিনি। তবুও যেহেতু আমরা জেনেছি উপাচার্যের সাথে কথা বলবো।