পরীক্ষকদের ভুল শোধরাতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি
বিসিএসের খাতা দেখা পরীক্ষকদের ভুল সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ৪১তম বিসিএসের ফল দেরির জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
৪১তম বিসিএসের ফল দেরির জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেউ কেউ পরীক্ষার্থীর কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য নম্বরই দেননি। অনেকে খাতার শেষে থাকা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন। লিখিত পরীক্ষার খাতা যেসব পরীক্ষককে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অনেকে ঠিক সময়ের মধ্যে খাতা দেখা শেষ করতে পারেননি। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছয় মাসে ১০০ খাতার মধ্যে মাত্র ১৫টি দেখেছিলেন।
কমিটি সম্প্রতি যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে ফল প্রকাশে দেরি হওয়ার জন্য পরীক্ষকদের দায়িত্বে গুরুতর অবহেলার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘ভয়াবহ দায়িত্বে অবহেলা’ হিসেবে।
আরও পড়ুন: ৯৮ শতাংশই নকল, ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি বাতিল।
পিএসসি সূত্র হতে জান যায়, ৪১তম বিসিএসের ফল দেরি হওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ফল দেরির কারণ হিসেবে ৩১৮ পরীক্ষকের দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। ভবিষ্যতে যাতে পরীক্ষকেরা খাতা দেখতে ভুল না করেন, সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পরেও যদি কোনো পরীক্ষক দায়িত্বে অবহেলা করেন, তাহলে তাঁকে পরীক্ষকদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি।
পরীক্ষকদের ভুল কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশেষ একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে পিএসসি। পিএসসির একজন সদস্য জানান, ৪১তম বিসিএসে যেসব পরীক্ষক তুলনামূলক কম ভুল করেছেন তাঁদের ডাকা হচ্ছে। বিসিএসের পরীক্ষক হিসেবে এই সেমিনারে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখানে থাকা পরীক্ষকরাই মূলত ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার সুযোগ পাবেন।
সেমিনারে কী কী হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেমিনারের অংশ হিসেবে সোমবার থেকে পিএসসির মিলনায়তনে সেমিনারে পরীক্ষকদের খাতা দেখার জন্য একটি কমন গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে পরীক্ষকদের। সেখানে চাকরিপ্রার্থীদের নাম–পরিচয় গোপন রেখে পরীক্ষা হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের খাতা দেখানো হচ্ছে।
পাশাপাশি, পরীক্ষকেরা যেসব ভুল সবচেয়ে বেশি করেন, সেগুলো চিহ্নিত করে দেখানো হচ্ছে। যেসব ভুল করা যাবে না, সেগুলোও দেখানো হচ্ছে। যেসব খাতায় পরীক্ষক অনেক ভুল করেছেন, সেসব খাতায় ভুলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো কেন ও কীভাবে ভুল, তা প্রেজেন্টেশনে দেখানো হচ্ছে। প্রতিদিন ১০০ পরীক্ষক এই সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, লিখিত পরীক্ষায় পরীক্ষকেরা বেশি ভুল করেন ও খাতা দেখতে বেশি সময় নেন। আমরা এই সময় কমিয়ে আনতে চাই। এ জন্য বিশেষ সেমিনারের ব্যবস্থা করেছি। আশা করা যাচ্ছে এখানে অংশ নেওয়া পরীক্ষকেরা নিজেরা লাভবান হবেন। একই সঙ্গে পরীক্ষার্থীরাও লাভবান হবেন। ফল প্রকাশে সময় কম লাগবে।
তিনি বলেন, সব পরীক্ষককে ডাকা হচ্ছে, যারা উপস্থিত থাকবেন, শুধু তাঁদেরই খাতা দেখতে দেওয়া হবে। অন্যরা যারা অনুপস্থিত থাকবেন, তারা কোনোভাবেই খাতা পাবে না।