বিসিএসে পাশাপাশি সিট পেতে রাত ৩টায় আবেদন, সতর্ক পিএসসি
৪৪তম বিসিএসে একই সিরিয়ালের একাধিক রোল নম্বরধারীর পাস করার অভিযোগ তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিষয়টি নজরে এসেছে সরকারি কর্ম কমিশনেরও (পিএসসি)। আগামীতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষার্থীরা বলছেন, ‘ম্যাকানিজম’ করে পাশাপাশি সিট ফেলছে অনেক পরীক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করে বৃত্ত ভরাট করছেন বলেও অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের। সদ্য প্রকাশিত ৪৪তম বিসিএসের ফল দেখলেই বিষয়টি সহজে অনুমান করা যায়। গত কয়েকটি বিসিএসে এমন অসাদু উপায় অবলম্বন চললে পিএসসি যেন দেখেও না দেখার ভান করছে বলে মন্তব্য তাদের।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ৬টায় ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে উত্তীর্ণ হয়ন ১৫ হাজার ৭০৮ পরীক্ষার্থী। ফল প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে একই সিরিয়ালের রোল নম্বরধারী একাধিক প্রার্থীর পাস করার তথ্য ছড়াতে থাকে।
প্রার্থীদের এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ৪৪তম বিসিএসের ফল বিশ্লেষণ করেও। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৮০০৪৪১১ এর পর ৪১২, ৪১৩, ৪১৪, ৪১৫, ৪১৬, ৪১৭, ৪১৮, ৪১৯, ৪২২, ৪২৩, ৪২৪, ৪২৬, ৪২৭, ৪৩০ ও ৪৩২ সিরিয়ালের ২২ জনের মধ্যে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ জন। ১৮০০৪৫২৬, ৫২৮, ৫২৯, ৫৩০, ৫৩২, ৫৩৩, ৫৩৪, ৫৩৬, ৫৩৯ ও ৫৪০ সিরিয়ালের ১৫ জনের ১০ জন।
১৮০০৪৮২৩, ৮২৫, ৮২৬, ৮২৮, ৮২৯, ৮৩১, ৮৩২, ৮৩৩, ৮৩৫, ৮৩৬, ৮৩৭, ৮৩৯, ৮৪০ সিরিয়ালের ১৩ জন। এছাড়া ১৮০০৪৯৬৪, ৯৬৫, ৯৬৬, ৯৬৭, ৯৬৯, ৯৭০, ৯৭২, ৯৭৫, ৯৭৭, ৯৭৮, ৯৮২, ৯৮৪, ৯৮৫, ৯৮৭, ৯৮৮, ৯৮৯, ৯৯০, ৯৯২, ৯৯৩, ৯৯৪, ৯৯৫,৯৯৬, ৯৯৭ ও ৯৯৮ সিরিয়াল থেকে ৩৫ জনের মধ্যে ২৪ জন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, রাজশাহী ও বাংলাদেশ কৃষিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রুপ করে নির্ধারিত একটি সময়ে বিসিএসের আবেদন করেন। আবেদনের চাপ যেন কম থাকে এজন্য গভীর রাতকে বেছে নেন তারা। এতে করে আবেদনকৃত সবার রোল ক্রমবর্ধমানভাবে একই সাথে পড়ে। পরবর্তীতে তাদের আসনও একই কেন্দ্রের পাশাপাশি পড়ে। এতে বাড়তি সুবিধা পায় আবেদনকৃতরা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক প্রার্থীর সাথে। তারা জানান, এটি খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিটি বিসিএসেই তারা গ্রুপ করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করেন। যেন তাদের সিটগুলো পাশাপাশি পড়ে। এতে করে পরীক্ষার হলে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। কক্ষ পরিদর্শকরা যখন বাইরে যায় কিংবা কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে তখন কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যায়।
মো. আশিকুর রহমান (ছদ্মনাম) নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০/৫০ জনের একটি গ্রুপ রাত ৩টার দিকে এক সাথে আবেদন করি। ওই সময় আবেদনের চাপ কম থাকে। এতে করে আমাদের অধিকাংশের সিট একই কেন্দ্রের একই রুমে পড়ে। পরীক্ষার হলে কথা বলার সুযোগ না থাকলেও কক্ষ পরিদর্শকরা একটু ব্যস্ত হয়ে পড়লেই কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যায়।
চাকরি প্রার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি’র চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এখন কেউ যদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলে তাহলে আপনি যে ব্যবস্থাই গ্রহণ করেন না কেন কিছু একটা করার থাকবে না। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে আগামীতে আরও সতর্ক থাকব। যেন পাশাপাশি একই রোলধারীরা না বসতে পারে।
এদিকে বিসিএসের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় পাশাপাশি রোল নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চাকরি প্রার্থীরা। তারা বলেছেন, বিসিএসে একসাথে টাকা জমা দিয়ে এক সাথে সিট পরে ব্যাপারটা অনেকাংশে ঠিক। মূল ব্যাপারটা হলো- টাকা জমা দেওয়ার পর এডমিট তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোতে রোলগুলো বলে দেয়। যার যে পাশে থাকে গ্রুপিং করে পরীক্ষা দেয়। এক সাথে টাকা জমা দিলে সিট না পরলেও পরে রোল জেনে এক সাথে হয়ে যায়। এই অবস্থায় পরীক্ষার পাঁচদিন আগে প্রবেশপত্র দিলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে সবার আগে দরকার পিএসসির সতর্কতা। আগামী বিসিএসে এটা হবে কিনা- সেটাই এখন দেখার বিষয়।