৪২তম বিসিএস থেকে অতিরিক্ত ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসাখাতে সেবা বাড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারে আরও ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। চলমান ৪২তম বিসিএস (বিশেষ) থেকে অতিরিক্ত এসব চিকিৎক নিয়োগ দেয়া হবে। এর ফলে এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২ হাজার এবং অতিরিক্ত ২ হাজারসহ মোট ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ পাবেন। সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পিএসসির চেয়ারম্যান মো: সোহরাব হোসাইন বলেন, ৪২তম বিসিএস থেকেই অতিরক্তি আরও ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে।
জানা গেছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যখাতে দ্রুত সাড়ে ১৭ হাজার নিয়োগ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার চিকিৎসক, ৪ হাজার নার্স, ৪০৯ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট এবং ১১ হাজার টেকনোলজিস্ট পেতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে পিএসসি ৪০৯ জুনিয়র কনসালট্যান্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
গত ৮ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাসিক সমন্বয়সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও ৪ হাজার চিকিৎসক ও ৮ হাজার নার্স নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবণা যাচাই-বাছাই করে ২ হাজার নার্স ও ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের অনুমোদন দেন। যদিও এখন পর্যন্ত পিএসসি ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের চাহিদাপত্র পায়নি।
এ বিষয়ে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) নূর আহমদ বলেন, ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের চাহিদাপত্র এখনো আসেনি। দ্রুত চাহিদাপত্র আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ৩৯তম বিসিএস থেকে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে স্বাস্থ্য খাতে বেশ জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসক সংকট চরমে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালগুলোতে পদ থাকা সত্ত্বেও প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পদে কোনো চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রথম ধাপে সাড়ে ৪ হাজার এবং ২০২০ সালে মে মাসে আরও অতিরিক্ত দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।
এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবং চলমান কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারই অংশ হিসাবে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর ৪২তম বিশেষ বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশিত হলে সাড়ে ৩১ হাজার আবেদন পত্র জমা পড়ে।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রিলিতে ৬ হাজার ২২ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। গত ৬ জুন মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় গত ২৪ জুন পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ৪২তম বিশেষ বিসিএস প্রিলিমিনারি (লিখিত) পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা দাবি জানিয়েছিলো যে, এই ২ হাজার চিকিৎসক যেন তাদের মধ্য থেকে নেওয়া হয়। কেননা চলমান করোনা মহামারির মধ্যেই ৪২তম বিশেষ বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৩১ হাজারেরও অধিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ হাজার ২২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে অর্ধেকেরও বেশি মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কিন্তু করোনা পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতি হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, ৪২তম বিসিএস পরীক্ষার কারণে গত ৭-৮ মাস তারা করোনাকে সামনে রেখে সরকারি চাকরির আশায় বসে ছিলেন। তাছাড়া ৪২তম বিসিএস এর পূর্ববর্তী বিশেষ বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকায় অধিকাংশ প্রার্থীই রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিশেষ বিসিএস থেকে নিয়োগ দিলে চলমান ৪২তম বিসিএসে বেশ শূন্য পদ থাকবে। কারণ তাদের অধিকাংশই চলমান ৪২তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের যুক্তি, পূর্ববর্তী বিশেষ বিসিএস শেষ হবার পর চিকিৎসকদের আরো ৩টি নতুন ব্যাচ বের হয়েছে। আগে সাত হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই নতুন করে ৪২তম বিসিএস থেকে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলে সিনিয়র জুনিয়রসহ সবার সুযোগের সমতা থাকবে, কেউ নিয়োগবঞ্চিত হবেন না।