৪৩তম বিসিএস: আবেদন বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী
৪৩তম বিসিএসে আবেদন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন স্বায়ত্তশাসিত, পাবলিক, জাতীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী। করোনার দীর্ঘ বন্ধে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা না হওয়ায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে অনার্স শেষ করায় বিসিএসসহ সব ধরনের চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেই অর্থে সেশনজটও নেই তাদের। অথচ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পাবলিক প্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের।
এদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে কোনো শিক্ষার্থী যেন চাকরি কিংবা বিসিএসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কভিড-১৯ এর কারণে এমনিতেই শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এরপর যদি তাদেরকে কোনো কিছুর হাত থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে হতাশাগ্রস্থ হয়ে অনেকে ভুল কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে যারা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা দেবেন তাদের ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি। আমাদের কোনো শিক্ষার্থী যেন চাকরি কিংবা বিসিএসের আবেদন থেকে বঞ্চিত না হয়; সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
তথ্যমতে, গত ৩০ নভেম্বর ৪২তম (বিশেষ) ও ৪৩তম (সাধারণ) বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারী কর্ম কমিশন (পিএসসি)। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪৩তম বিসিএসের আবেদন শুরু হবে। আবেদন গ্রহণ চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, বিসিএসে আবেদন করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ফাইনাল ইয়ারের সবগুলো বিষয়ের পরীক্ষা শেষ করতে হবে। তবেই ওই শিক্ষার্থী আবেদন ফরম পূরণের সময় অ্যাপেয়ার্ড লিখে আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তীতে ফলাফল প্রকাশের পর যোগ্য হলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। তবে করোনার দীর্ঘ বন্ধে স্নাতকের পরীক্ষা না হওয়ায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেহেতু বিসিএসে আবেদন শেষ হওয়ার পর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে অনেক সময় লেগে যায়, তাই যারা স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণ কিংবা যাদের কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাদের সকলকেই অ্যাপেয়ার্ড হিসেবে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হোক।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তানিন মাহমুদ বলেন, সেশনজটের কারণে ৪১তম বিসিএসের আবেদন করতে পারিনি। এখন ফাইনাল পরীক্ষা না হওয়ায় ৪৩তম বিসিএসে আবেদনের সুযোগও হাতছাড়া হতে চলেছে। প্রাইভেটের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হলেও আমাদের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষায় এখন এক ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আবেদনের সময় বৃদ্ধি করা হোক। না হলে আমরা যারা ফাইনাল ইয়ারে আছি তাদের অ্যাপেয়ার্ড হিসেবে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হোক।
তবে স্নাতকের সবগুলো বিষয়ের পরীক্ষা শেষ না হলে বিসিএসে আবেদনের কোনো সুযোগ নেই বলে পিএসসির পরীক্ষা শাখার (ক্যাডার) কর্মকর্তা নেয়ামত উল্ল্যাহ ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে কোনো বিসিএসে আবেদনের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই স্নাতকের সব বিষয়ের পরীক্ষা শেষ করতে হবে। তবেই তিনি অ্যাপেয়ার্ড হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। এর বাইরে আবেদনের কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় স্নাত শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।