৪ বছরে ১৫ হাজার বিসিএস ক্যাডার সুপারিশ পিএসসির

  © সংগৃহীত

সম্প্রতিক সময়ে চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি যে চাকরিটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উঠেছে, তা হলো বিসিএস। এর পেছনে মূলত কাজ করছে চাকরির নিরাপত্তা, বেতনসহ আকর্ষণীয় সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) এক পরিসংখ্যানে বলছে, বিসিএসে গত ১০ বছরে পিএসসির সুপারিশ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। গত ৪ বছরে সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে ১৫ হাজার বিসিএস ক্যাডার সুপারিশ করা হয়েছে। এসময়ে আরও ৫ হাজার ৪৬ জনকে নন-ক্যাডারে সুপারিশ করা হয়েছে বলে পিএসসি সূত্রে জানা গেছে।

কেন বিসিএস এত জনপ্রিয়- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ সাদিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান পিএসসি প্রিলি থেকে শুরু করে নিয়োগ হওয়া পর্যন্ত স্বচ্ছতা বজায় রাখে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরণের বিশ্বাস চলে এসেছে যে, কোন প্রকার তদবির ছাড়াই সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব। এটি বিসিএসে আবেদন বাড়ার অন্যতম কারণ।

দ্বিতীয়ত— বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও সামাজিক মর্যাদা।

তৃতীয়ত— আমরা যে শুধু ক্যাডার নিয়োগ দেই তা নয়, নন ক্যাডারেও ২ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দিয়ে থাকি। ফলে অনেক বেশি প্রার্থী আবেদন করছে।

চতুর্থত— একজন চাকরিপ্রার্থী বিসিএস প্রস্তুতি নিলে অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতিও হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ কেউ বিসিএস প্রস্তুতি নিলে ব্যাংক, শিক্ষক নিয়োগ এমনকি বিমানসহ বিভিন্ন স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে পারেন। এ কারণে একজন চাকরিপ্রার্থী বিসিএসকেই টার্গেট হিসেবে বেছে নেয়। এটিও বিসিএসে প্রার্থী বাড়ার অন্যতম কারণ।

পঞ্চতম— উচ্চশিক্ষার পর অনেক শিক্ষার্থীই দেশের বাইরে চলে যায়। আবার অনেকের মধ্যেই দেশপ্রেম কাজ করে; ফলে তারা দেশেই থেকে যায় এবং দেশের জন্য কিছু করতে চায়। এ ধরণের বড় একটি শ্রেণি বিসিএস দিয়ে থাকে।

বিসিএস জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আরেক কারণ হলো— অনেক চাকরিপ্রার্থীই নিজের দেশ, বাংলাদেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধসহ বিশ্ব জগৎ সম্পর্কে জানতে চায়। বিষয়গুলো জানার মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে চায়।

আপনি থাকা অবস্থায় পিএসসি কর্তৃক বিসিএসে কত প্রার্থীকে (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার) নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে-এ প্রশ্নের জবাবে ড. মোহাম্মদ সাদিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালের ২ মে থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮১৩ জনকে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ করেছি। আর নন-ক্যাডারে সুপারিশ করেছি ৫ হাজার ৪৬ জনকে।

২০১৮ সালের শেষের দিকে পিএসসি থেকে জানানো হয়েছিল, ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পিএসসি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করেছিল ২০ হাজার ২২৫ জন। আর ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পিএসসি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করেছে মোট ৬০ হাজার ১১৮ জন।  পিএসসির ২০০৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে তখন পিএসসি জানিয়েছিল।

পিএসসি’র ২০০৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সময়ে পিএসসি ২৬ হাজার ৬৪৫ জনকে ক্যাডার পদে সুপারিশ করে। এ সময়ের মধ্যে ৩৩ হাজার ৫৭৬ জনকে নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করে পিএসসি। বিসিএস ছাড়াও পিএসসি কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদেও সুপারিশ করা হয়। ২০০৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত পিএসসি ৩ হাজার ১৮ জনকে প্রথম শ্রেণি এবং ২২ হাজার ৬৫৩ জনকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া, নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণির পদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন নার্সিংও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ‘সিনিয়র স্টাফ নার্স’ পদে ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজারকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি।

২০১৮ সালের পর এ পর্যন্ত ৩৮তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ২০৪ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে পিএসসি। তাছাড়া ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এছাড়াও এ সময়ে ৩৬তম এবং ৩৭তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগের কয়েকশ সুপারিশ করেছে পিএসসি।

বর্তমানে কোন বিসিএসের কি অবস্থা

৪০তম বিসিএস: ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপের খাতা মূল্যায়নের কাজ চলছে। খাতা মূল্যায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী অক্টোবরের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে পিএসসি একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

৪১তম বিসিএস: করোনার কারণে আটকে আছে ৪১তম বিসিএস এর প্রিলি। চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না বলে পিএসসি সূত্রে জানা গেছে। পিএসসির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আমরা চলতি বছরের মার্চেই ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলাম। তবে ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করার কাজ করতে করতে দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে যায়। সঙ্গত কারণেই এখনো এই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ