করোনায় থমকে গেছে ৪১তম বিসিএস প্রিলি
গত এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে উঠেছে বিসিএস। আর এর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিতও হতে হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিকে। এক্ষেত্রে নতুন তথ্য হলো- করোনায় থমকে গেছে ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এতে বিভিন্ন পদে ২ হাজার ১৩৫ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়। এই বিসিএসে রেকর্ড ৪ লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থী আবেদন করেন। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রায় এক বছর হতে চললেও নানা কারণে এখনো পিএসসির পক্ষে প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই নেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে বিসিএসপ্রত্যাশী প্রায় পাঁচ লাখ তরুণের দিন হতাশায় কাটছে।
তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন মাসে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল পিএসসির। তবে করোনার কারণে তা ভেস্তে যায়। দেশে চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় এই পরীক্ষা চলতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিএসসির একটি সূত্র জানায়, চলতি বছর শেষ হতে এখনও বেশ কয়েক মাস। আশা করি, বছরের শেষ দিকে ৪১তম প্রিলি পরীক্ষা নিতে পারব। তারপরও আমরা সন্দিহান। কারণ জেএসসি, জেডিসি ও এইচএসসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা করোনার ফলে বন্ধ রয়েছে। এতটুকু বলা যায়, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই পরীক্ষাগুলো আগে শেষ করা হবে। এর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের বরাত দিয়ে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ইশরাত শারমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিয়ে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এই বিষয়ে পরে জানানো হবে।
এদিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় এক বছর হতে চললেও প্রিলিমিনারি পরীক্ষা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিসিএস প্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও এখনো প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হয়নি। এর পর লিখিত তার পর মৌখিক পরীক্ষা। ৪১তম বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে কত সময় লাগবে কে জানে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষাসহ ৪১তম বিসিএসর পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে ৪১তম বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মারুফা আক্তার মিম বলেন, গত বছর ৪১তম বিসিএসের আবেদন করেছি। এখনো প্রিলিমিনারি শেষ করতে পারিনি। মানসিকভাবে চরম হতাশ আমি। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে আড়াই থেকে তিন বছর সময় নেওয়াটা অযৌক্তিক। বিশ্বে এমন নজির কোথাও নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু ৪১তম বিসিএস নয়; প্রায় প্রতিটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পিএসসির প্রায় ৩ বছর লেগে যায়। সদ্য চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা ৩৮তম বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে পিএসসির প্রায় সাড়ে ৩ বছর সময় লেগেছে।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ২৭তম বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছে ৩ বছর ৩ মাস। এছাড়া ২৮তম বিসিএসে ২ বছর ৩ মাস, ২৯তম বিসিএসে ২ বছর ২ মাস, ৩০তম বিসিএসে ২০ মাস, ৩১তম বিসিএসে ১৭ মাস, ৩২তম বিশেষ বিসিএসে ১৪ মাস ও ৩৩তম বিসিএসে ২০ মাস সময় লাগে। তবে গেজেট প্রকাশ ও যোগদানের তারিখ ধরলে দেখা যায় প্রতিটি বিসিএসেই প্রায় আড়াই থেকে তিন বছর সময় লেগেছে।
ফলাফল প্রকাশের দিক দিয়ে সবচেয়ে কম সময় লেগেছিল ৩৫তম বিসিএসে। তবে পুলিশ যাচাই আর গেজেট প্রকাশ করতে করতে সেই আড়াই বছরই লেগে যায়। ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএসেও লেগে যায় তিন বছরের বেশি। ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশের আগেই তিন বছর পেরিয়ে যায়। চলতি মার্চে ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখনো সেই ফল প্রকাশের অপেক্ষা। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। আর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই নিতে পারেনি পিএসসি।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বিসিএস। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার এমন ধীর গতির জন্য অনেক মেধাবী আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে সংস্কার প্রয়োজন।
তাদের ভাষ্য, অনেক সময় চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে প্রায় এক বছর চলে যায়। এক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কেননা ৩৯তম বিসিএসে পুলিশি যাচাই ছাড়াই দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা বলছেন পিএসসি একটু আন্তরিকতার সাথে কাজ করলেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে।