ফণীর প্রভাব, বিসিএস প্রিলি পেছানোর দাবি
দেশের উপকূল জেলাগুলোয় ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় ফণী। আবহাওয়ার প্রতিকূলতার শঙ্কায় ইতোমধ্যেই সারাদেশে নৌ-চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকেও নেওয়া বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুর্যোগপূর্ণ এমন পরিবেশের মধ্যেই কাল অনুষ্ঠেয় বিসিএস প্রিলি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন বেশ কয়েকটি জেলার প্রার্থীরা। তারা বলছেন, উপকূলের ৮-১০টি জেলার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পেছানো উচিত। কারণ, তাদের প্রার্থীতার সংখ্যা কম নয়।
চাকরি প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূল জেলাগুলোতে ৭নং বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নৌ চলাচলও বন্ধ। এ অবস্থায় কোনোভাবেই পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা জানান, লঞ্চ বন্ধ, দক্ষিণ বঙ্গের ছেলে-মেয়েরা বের হবে কি করে? তাদের বক্তব্য, ওই অঞ্চলের অন্য সব পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে; সেখানে পিএসসি এত বড় ঝুঁকি কেন নেবে? তাদের প্রশ্ন- লঞ্চ বন্ধের কারণে যারা পরীক্ষা দিতে পারবে না; তাদের কি বঞ্চিত করা হবে না?
মোস্তফা কামাল নামে এক শিক্ষার্থী বলছেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে যদি কোন পরীক্ষার্থীর ক্ষতি হয় তার দায় কে নিবে?’
বরিশালের শামীম ইমরান বলছেন, ফণির কারণে ভোলা-বরিশাল লঞ্চ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ভোলার অনেকেই আজ বরিশালে রওনা দেয়ার কথা ছিল। পিএসসি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত না নিলে অনেক পরীক্ষার্থী বিপদে পরবে। কারণ, সকল রুটে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ আছে।’ আবু সাদাত তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, এখনো আশা রাখছি, হাজার হাজার পরীক্ষার্থীরা কথা বিবেচনায় পিএসসি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে।
এদিকে পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পিএসসিতে একটি লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দাবি করেছেন এক পরীক্ষার্থী। মো. তারেক রহমান নামে ওই ছাত্র তার চিঠিতে লিখেছেন, ‘৩ মে, ৪০ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। কিন্তু আতঙ্কের বিষয় এই যে, খুব সহসায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘ফনী’ আমাদের দেশের চেয়েও বড় ক্ষেত্র নিয়ে দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হবার আগাম বার্তা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর উপকূল এলাকাগুলোতে ৭নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লঞ্চ, ফেরীসহ সব ধরণের নৌ-যান। উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশব্যাপী একটি নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া অযৌক্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন সচেতন ছাত্র প্রতিনিধিরা।’ আবেদনপত্রে সব প্রার্থীর কথা চিন্তা করে পরীক্ষা পেছানোর আর্জি জানানো হয়।
যদিও পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই হবে বলে জানিয়েছেন পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি বলেছেন, পরীক্ষা চলাকালীন কোথাও ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে, এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। তাই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা স্থগিত বা পিছিয়ে দেয়ার কোনো কারণ নেই। যদি প্রকৃতিক দূর্যোগ বা বড় কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে, সে পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামীকাল নির্ধারিত সময়ে ৪০ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়, সুপার সাইক্লোনে রূপ নেওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ব্যাপক শক্তি নিয়ে উড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। এটি ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বিস্তার নিয়ে শুক্রবার দুপুরের দিকে উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি’র মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।