দ্রুত লিখিত পরীক্ষার রুটিনের দাবি ৪৬তম বিসিএস প্রিলিতে উত্তীর্ণদের
দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার রুটিনের দাবি জানিয়েছেন প্রিলিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল ৪৬তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯ মে প্রকাশিত ফলাফলে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ৬ শত ৩৮ জন জন পরীক্ষার্থী।
তিনি বলেন, পরিতাপের বিষয় হল বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের কয়েকজন কর্মচারী বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে এক কর্মচারী তার দেওয়া জবানবন্দিতে ৪৬ তম বিসিএস প্রিলিতে তাদের চুক্তিতে ১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ করানোর কথা বলেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে পুরো বিসিএস পরীক্ষা বাতিলের দাবি করছেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, যারা ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের অনেকে নাপ্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে। কেউ প্রেগন্যান্সির কঠিন সময়ে পরীক্ষার বইকে সঙ্গী করেছেন, কেউ চাকরির স্থায়িত্ব ত্যাগ করে, আবার কেউ সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা পেছনে ফেলে বেছে নিয়েছেন নতুন চ্যালেঞ্জ। ডাক্তারদের কেউ এফ সিপি এসে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ত্যাগ করেছেন, যেন এই রিটেন পরীক্ষার জন্য আরও একটু সময় দিতে পারেন। এই যে আত্মত্যাগ, এই যে প্রত্যাশা-একে কীভাবে বাতিলের খাতায় ফেলা যায়?
সোহাগ বলেন, পিএসসি নামক আমাদের এই সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই তার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত। কিন্তু যদি চাপের মুখে আজ তারা অবিচার করে, তবে দেশের এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি তার গৌরব হারাবে। অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী, যাদের কারও কারও জীবন তাদের পড়ার টেবিলে লুকিয়ে থাকা কষ্টের গল্পে ভরপুর বিয়ের চাপ, পরিবারের দায়িত্ব, কিংবা বাড়তি খরচের বোঝা। তারা বিভাগীয় শহরে এসেছে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে, যেন সেই স্বপ্ন পূরণের কষ্টকে বাস্তব রূপ দিতে পারে। ৪৬তম বিসিএস বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত তাদের কাছে অভিশাপ হয়ে আসবে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ১৬৪ ধারায় দেওয়া ওই কর্মচারীর জবানবন্দি যদি সত্যি হয় তবে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের দাবির যেন ন্যায্য বিচার হয়, যাতে তাদের পরিশ্রমের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে। বাতিল নয় বরং দ্রুত লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হোক যাতে প্রতিটি পরীক্ষার্থী তাদের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
নতুন কমিশনের প্রতি পরিক্ষার্থীদের আহ্বান, যদি নতুন কমিশন মনে করে স্বচ্ছতার স্বার্থে আবার তদন্ত হওয়া দরকার টাটা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবে। প্রশ্নফাঁসের তদন্ত করে করে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে কমিশন যেন অভিযুক্ত দের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে। কোনো পরিশ্রমী ও সৎ পরীক্ষার্থী যেন এই নতুন বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এমন ব্যবস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের কাছে অতি দ্রুত ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান পরীক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে, জুলাই বিপ্লবে শহিদ হওয়া সকলের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, মেহেদী হাসান, নুরজাহান খানম, রাশেদুল ইসলাম, আনোয়ারুল হকসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনের মত শিক্ষার্থী যারা প্রত্যেকেই ৪৬ তম প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।