২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:০৫

গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তির পরেও বিসিএস প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পায়নি পিএসসি!

পিএসসি  © সংগৃহীত

গত ৭ জুলাই একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বেশ কয়েকবছর ধরে পিএসসির অন্তত ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। এই চক্রে পিএসসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত বলেও দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি অভিযান চালিয়ে পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনার তদন্তে গত ৯ জুলাই সরকারি কর্ম কমিশনের যুগ্মসচিব আব্দুল আলীম খানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পিএসসি। কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন পিএসসির পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা ও মোহাম্মদ আজিজুল হক। সম্প্রতি কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ৪৬তম বিসিএস প্রলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের কোনো প্রমাণ মেলেনি। যদিও গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত ইস্যুতে সিআইডির (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে অভিযোগ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যম দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

পিএসসির গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল আলীম খান গণমাধ্যমটিকে জানান, ‘প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি সামনে আসে একটি বেরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রকশের পর। পরবর্তীতে সিআইডি অভিযান চালিয়ে কয়েজনকে গ্রেপ্তার করে। আমরা তদন্তের স্বার্থে সিআইডিকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সময় চেয়ে চেয়ে কালক্ষেপণ করেছে, কোনো তথ্য দেয়নি। এছাড়া, আমরা বেসরকারি টেলিভিশনের কাছেও প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছি। তারা বলেছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে। তবে তারা সেটি আমাদেরকে প্রোভাইড করেনি।' আমরা আমাদের মতো করে তদন্ত করেছি। যার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তদন্তে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

পিএসসির তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির মিডিয়া উইংয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, ‘সিআইডি অভিযুক্তদের আটকের পর মামলা দায়ের করেছে। অর্থাৎ, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই মামলা হয়েছে। তারা কোন প্রক্রিয়ায় তদন্ত করেছেন সেটি বোধগম্য নয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। 

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কী বলেছেন অভিযুক্তরা?

সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে। জবানবন্দি দেওয়া ব্যক্তিরা হলেন— পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী, ডেসপ্যাচ রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন ও তার ভাই সায়েম হোসেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিটন সরকার। তাদের মধ্যে আবেদ আলী, খলিলুর রহমান, সাজেদুল ইসলামের স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দির এক পর্যায়ে সাজেদুল দাবি করেন, এই মামলায় গ্রেপ্তার আবু সোলেমান মো. সোহেলের সাথে অনুমানিক ৭-৮ বছর আগে তার পরিচয় হয়। সোহেল ঢাকার মিরপুরে ডেভেলপারের ব্যবসা করেন। সাজেদুল ডেভলপার সোহেলের কাছে জানতে পারেন ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে।

সাজেদুল বলেন, ‘আমি ১৭ জন প্রার্থী ম্যানেজ করে সোহেলকে দেই। যার মধ্যে ১২ জন প্রার্থী খলিলুর রহমান দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান এবং রুবেল নামে দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই প্রার্থীদের সোহেল সারারাত প্রশ্ন পড়িয়েছেন। ১৭ প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জন প্রার্থী ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ করেন। আমি উত্তীর্ণ ১৩ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন অ্যামাউন্টে সর্বমোট ১৫–১৬ লাখ টাকা নিয়েছি। এর মধ্যে প্রার্থী প্রতি ১ লাখ হিসেবে ১৩ লাখ টাকা আবু সোলেমান মো. সোহেলকে বুঝিয়ে দিয়েছি। 

খলিলুর রহমান তার জবানবন্দিতে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় সাজেদুল ইসলামকে ১২ জন ক্যান্ডিডেট দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘সাজেদুল ইসলাম পিএসসির সদস্য হেলাল উদ্দীন স্যারের এমএলএসএস। আমি প্রার্থীদের কাছ থেকে জন প্রতি ১ লাখ করে টাকা নিয়ে সাজেদুল ইসলামের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাই।’ এর আগেও বিসিএস-এর প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেন খলিলুর রহমান।

এদিকে, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর বিষয়ে পিএসসির তদন্ত কমিটির প্রধান আবদুল আলিম বলেন, ‘জুডিশিয়ারির বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে। তবে আমাদের হাতে সময় বেশি ছিল না। কারণ এই প্রতিবেদনের জন্য অনেক বিষয় আটকে ছিল। যেমন— রিটেন ও ভাইভা।’