১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:১০

পদত্যাগে প্রস্তুত পিএসসি চেয়ারম্যান-সদস্যরা, অপেক্ষা সবুজ সংকেতের

পিএসসি চেয়ারম্যান এবং কমিশনের ১০ সদস্য। অন্য সদস্যদের ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।  © ফাইল ছবি

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তরের শীর্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অনেকে। সেই হাওয়া লাগতে যাচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসিতে। পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা। অপেক্ষা শুধু সরকারের সবুজ সংকেতের। তবে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা পেলে তখন আর কোনো কর্মকর্তা পদত্যাগ করবেন না বলে জানা গেছে।

রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পিএসসি’র নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চার কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন থেকে ‍শুরু করে পিএসসি’র সদস্যরা পদত্যাগের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিষয়টি জানিয়ে সরকারে উচ্চপর্যায়ে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কোনো নির্দেশনা না আসায় এখনো পদত্যাগ করেননি তারা। এমনকি দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন কি না সে বিষয়েও সুস্পষ্ট কোনো কিছু জানানো হয়নি সরকারে পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পিএসসিতে চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য নিয়োগ হয় রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে। সরকারে যেভাবে চাইবে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো। সরকার চাইলে যে কোনো মুহূর্তে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান তিনি।’ 

পিএসসি’র একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে পিএসসি সদস্যরা নিয়মিত অফিস করছেন না। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভার্চুয়ালি অফিস করা হচ্ছে। পিএসসি চেয়ারম্যানসহ তিন/চারজন সদস্য অফিসে আসলেও ৪১-৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের প্রার্থীদের আন্দোলনের কারণে তারাও অনিয়মিত হয়ে গেছেন। তবু ভিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন অনেকে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘সরকার পতনের পর আমরা ধরেই নিয়েছিলাম যে সবকিছু পরিবর্তন হবে। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন সবাই। পদত্যাগ করতে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে এবং সরাসরি দেখা করে কথাও বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত পেলে চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পদত্যাগ করবেন। তবে যদি দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা আসে, তাহলে সেটি করতেও প্রস্তুত রয়েছেন চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘পিএসসি চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন সদস্যের পদত্যাগপত্র তৈরি করে রাখা হয়েছে। সেখানে শুধু স্বাক্ষর করা বাকি। তবে পিএসসি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো নয়। এখানে অনেক কাজ। চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ যদি একসঙ্গে পদত্যাগ করেন তাহলে সংকট দেখা দিতে পারে। এজন্য সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই।’

জানা গেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. সোহরাব হোসাইন বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পিএসসিতে তার চার বছর পূর্ণ হবে। 

এছাড়াও সদস্যদের মধ্যে এস. এম. গোলাম ফারুক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। কমিশনের আরেক সদস্য ফয়েজ আহম্মদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ছিলেন।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব ছিলেন এন সিদ্দিকা খানম। আর নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) জাহিদুর রশিদ, ঢাবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুবিনা খোন্দকার ও অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেনও ছিলেন আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। এর মধ্যে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন গত বছর আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক–বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হয়েছিলেন। সাংবিধানিক পদে থেকেও দেলোয়ার হোসেনের রাজনৈতিক দলের কমিটির সদস্য হওয়া নিয়ে আলোচনা হলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

কমিশনের সদস্য কে এম আলী আজম অবসরের পূর্বে সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আরেক সদস্য মো. খলিলুর রহমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে তার কর্মজীবন শেষ করেন। এছাড়াও অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক কমিশনে আসার পূর্বে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে তার কর্মজীবন শেষ করেন।

কমিশনের আরেক সদস্য মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব শেষে পিএসসিতে আসেন হেলালুদ্দিন আহমদ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদের দায়িত্ব থেকে ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৪তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে মোহা. শফিকুল ইসলাম নিয়োগ পান পিএসসিতে।

এছাড়াও কমিশনের আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে ছিলেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত মুখ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।