বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পায়নি পিএসসি
বিসিএসসহ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওয়াতাধীন কোনো নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পায়নি পিএসসি। ফলে অভিযোগ ওঠা পরীক্ষাগুলো বাতিল হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) পিএসসি’র একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে সংবাদ প্রচার করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। এ সংবাদে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ক্যাডার ও নন–ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করে পিএসসি। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সরকারি কর্ম কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল আলীম খানকে। কমিটির সদস্য পিএসসির পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা। তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব করা হয় পিএসসির পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হক।
এই কমিটি দীর্ঘদিন প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তদন্ত করে। ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কোথাও কোনো পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পায়নি। প্রতিবেদনটি খুব দ্রুত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র এক কর্মকর্তা আজ বুধবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ খতিয়ে দেখেছে। সিআইডি, এনএসআইসহ পরীক্ষক, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তবে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেহেতু প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, সেহেতু কোনো পরীক্ষা বাতিলের সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। এরপর এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে গত ৭ জুলাই বিসিএসসহ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রচার করে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অনেক অভিযোগ আসতে শুরু করে। কয়েক বছর আগে থেকেই এসব অভিযোগের সূত্র মেলাতে কাজ শুরু করে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের অনুসন্ধানী দল। খোঁজ মেলে এমন এক ব্যক্তির, যিনি চক্রটির কার্যক্রম খুব কাছ থেকে দেখেছেন।’ চক্রটির কার্যক্রম কাছ দেখা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তিনি (অভিযুক্ত ব্যক্তি) নিজ মুখে গল্প করতেন আমি চার–পাঁচজনকে বিসিএসে ক্যাডার বানিয়েছি। নন–ক্যাডার অফিসারও বানিয়েছি, বৈদেশিক ও কর্মসংস্থানে...। আমার কাছে সবকিছু হয়। তিনি আমাকে বলেন, ৩৩ ও ৩৪তম বিসিএসে কাজ করেছি চার–পাঁচটা ক্যাডার বানিয়েছি। ৩৫তম প্রিলিমিনারিতে আমি পড়াইছি।’ পিএসসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘আমি দেখছি রাজস্ব কর্মকর্তার প্রশ্ন তিনি পান, অনেক পড়িয়ে ৫–৬ জনের চাকরি হয়। ওই চক্রটির কর্মকর্তা পরে পিএসসির নন–ক্যাডারের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এরপর এটিও, রাজস্ব কর্মকর্তা ও স্টাফ নার্সের ২০–২৫টা চাকরি হয় তাঁর মাধ্যমে।’
পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘উপপরিচালক হক মোহাম্মদ আবু জাফর স্যারের মাধ্যমে ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ট্রাঙ্ক থেকে প্রশ্নপত্র আমাকে দিয়েছেন।’
বিপিএসসির নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির খবরের তথ্যগুলো মিলিয়ে নিতে টেলিভিশন চ্যানেলটি বেছে নেয় ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাকে। প্রস্তুতি শেষে ছদ্মবেশী প্রার্থীকে তুলে দেওয়া হয় চক্রের সদস্যদের হাতে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ৫ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যে প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, হোয়াটসঅ্যাপে তার একটা কপি চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের হাতে আসে অন্তত ১ ঘণ্টা আগে। আর অজ্ঞাত স্থানে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হয় আগের রাতেই। রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া এক ছদ্মবেশী টেলিভিশন চ্যানেলটিকে বলেন, ‘তাঁর যে প্রশ্ন দিয়েছিল, যা কমন ছিল, তাতে আমি সাড়ে ৮৫টি অ্যানসার করে এসেছি।’
১৫টি গোপন স্থানের খোঁজ পেয়েছে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। সেখানে ৩০০ শিক্ষার্থীকে রেলওয়ের প্রশ্ন পড়ানো হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্যের স্বীকার করেছেন পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘উপপরিচালক হক মোহাম্মদ আবু জাফর স্যারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রটি ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ট্রাঙ্ক থেকে আমাকে দিয়েছেন। তিনি (সাজেদুল ইসলাম) অবগত আছেন ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।’
এরপর প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্যপ্রমাণ নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনের কাছে যায় চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আমাদের কমিশনের যে ক্ষমতা আছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রমাণ হতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রমাণিত হলে, কমিশন বিবেচনা করবে, পরীক্ষা থাকবে কি থাকবে না।’
পিএসসির অর্ধডজন কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত বলে সংবাদে দাবি করা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে পিএসসি’র তদন্তে এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি পিএসসি।
এদিকে বিসিএসসহ নন-ক্যাডারের কোনো পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ না পাওয়ায় পরীক্ষার্থী এবং প্রশাসনে স্বস্তি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে স্থগিত হওয়া সকল পরীক্ষার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারবে সাংবিধানিক সংস্থাটি।