‘বিসিএস পাস করলাম, প্রশাসন ক্যাডার হলাম, কিন্তু অজানা কারণে জীবনের ১৪টি বছর হারিয়ে গেল’
তরুণদের কাছে সোনার হরিণ বিসিএস। কঠোর অধ্যবসায়ের পাশাপাশি ভাগ্য সহায় হলে তবেই একজন বিসিএস ক্যাডার হতে পারেন। এ দুটোই ছিল নিয়োগবঞ্চিত ২৫৯ জন প্রার্থীর। তবে চূড়ান্ত সুপারিশের পরও নিয়োগ পাননি তারা। এ সব প্রার্থীদের সবাই শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েছিলেন। তবে নেতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদনের কারণে নিয়োগবঞ্চিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত নিয়োগবঞ্চিত ২৫৯ জনকে নিয়োগ দিয়ে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নিয়োগবঞ্চিতদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে সবার আগে রয়েছে মাহবুব উল আলম। ২৮তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছিলেন তিনি। ২০১০ সালে এ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছিল পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)।
দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষার পর গেজেট প্রকাশ হওয়ার বিষয়ে মাহবুব উল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, “বিসিএস পাশ করলাম। প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। অজানা কারণে বাদ পড়ার পর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি বছর আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। এখন এই হারানো সময়ের মূল্য আমি কোথায় ফিরে পাবো? আমার নামে মামলাও ছিল না, পুলিশের রিপোর্টও ভাল ছিল। এরপরও আমার নিয়োগও হয় নি।”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ কাজটি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চকে (এসবি) করিয়ে থাকে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিসি অফিসের মাধ্যমেও ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে ১৪টি বিষয় যাচাই করে দেখা হয়। এর মধ্যে প্রার্থী কোথায় পড়ালেখা করেছেন, কোথায় থেকেছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা রয়েছে কি না, গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কি না। অনেকের অভিযোগ, যে ১৪টি বিষয় পুলিশ ভেরিফিকেশনে যাচাই করার কথা তার বাইরে গিয়েও প্রার্থীদের তথ্য নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে প্রার্থী কিংবা তার পরিবার কোন মতাদর্শের, কোন রাজনৈতিক দলের আদর্শে বিশ্বাসী—তা গুরুত্ব সহকারে দেখা হত। এর ফলে এসব প্রার্থী বাদ পড়ে থাকতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল যোবায়ের বলেন, আমি ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছিলাম। তবে গেজেটে আমার নাম ছিল না। পরে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর তার নামে গেজেট প্রকাশ করা হয় নি।
কেন গেজেট হয় নি, সেই প্রশ্নের উত্তরে যোবায়ের আরও বলেন, “আমি কোন রাজনীতি করি না। আমার নামে কোন মামলা নেই। আমার বাবা এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। সে কারণে আমি ক্যাডার হয়েও বাদ পড়েছি”।