পিএসসির দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নজরবন্দি, ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে অন্তত দু’জন পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা পদমর্যাদায় উপপরিচালক (ডিডি) ও সহকারী পরিচালকের (এডি) ওপরে।
তবে তথ্য-প্রমাণসহ আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত ওই দু’জনের নাম-পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি তদন্তসংশ্লিষ্ট এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তবে গ্রেপ্তার কয়েকজনের সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে তাদের তথ্য আদান-প্রদানের কিছু তথ্য গোয়েন্দারা পেয়েছে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, দুই দশকের বেশি পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। তাঁর চক্রে অনেকেই আছেন। আবেদ এক সময় পিএসসির আলোচিত সদস্য অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের গাড়ি চালাতেন। আবেদ ও সাজেদুল জিজ্ঞাসাবাদে একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছেন। সাজেদুল কখনও দাবি করছেন, চক্রের ‘হোতা’ পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর। তিনি মূলত জাফরের মাধ্যমেই প্রশ্ন পেতেন। চাকরি পাওয়ার পর কেউ যাতে টাকা নিয়ে নয়ছয় করতে না পারে, সে জন্য অগ্রিম চেক রাখতেন।
তিনি বলেন, চাকরির আশায় বিভিন্ন অঙ্কের চেক দেওয়া ৬০-৭০ জনের নাম-পরিচয় পেয়েছে গোয়েন্দারা। আরও অনেককে খোঁজা হচ্ছে। তদন্তের অংশ হিসেবে আরও অনেককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে পিএসসিতে কর্মরত দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন। তারা যাতে পালাতে না পারেন, সে ব্যাপারে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি সামনে আসার পর মোবাইল ফোন বন্ধ করে তারা ‘গা-ঢাকা’ দিয়েছেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সিআইডি পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, খলিলুর রহমানসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস করে হঠাৎ তারা বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন, বিশদ জানার চেষ্টা চলছে। জড়িতদের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্বজনের কেউ অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন করলে, তাঁকেও আইনের আওতায় এনে তদন্ত করা হবে। পিএসসির দুই কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবে গত তিন মাসে ২০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
প্রশ্ন ফাঁসে গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান জানান, পিএসসির সাবেক এক কর্মকর্তাও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। তিনি ‘সবুজ সংকেত’ দিলেই শুধু অর্থ লেনদেনের বিষয় চূড়ান্ত হতো। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়ামুলও প্রশ্ন ফাঁসে নানা সময় তাঁকে সহযোগিতা করতেন। ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় ১০ চাকরিপ্রত্যাশীর কাছে এ চক্রের মাধ্যমে প্রশ্ন গেছে। তাদের মধ্যে ছয়জন লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন। মৌখিক পরীক্ষায় তিনজন বাদ পড়লেও, বাকিরা চাকরি করছেন।