বিসিএসের প্রশ্নফাঁস: সন্দেহের তালিকায় প্রশ্ন প্রণয়নকারীরাও
গত ১২ বছরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আওতাধীন ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার নিয়োগের অন্তত ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রশ্ন প্রণয়নকারীরাও সন্দেহের তালিকায় চলে এসেছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে বলে জানা গেছে।
পিএসসির একটি সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, ক্যাডার অথবা নন-ক্যাডার পরীক্ষার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিজ্ঞ ব্যক্তিদের থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন চাওয়া হয়। প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের মধ্যে কেউ ২০টি অথবা কেউ ৪০টি প্রশ্ন হাতে লিখে জমা দেন। অনেকক্ষেত্রে তারা যে প্রশ্নগুলো জমা দেন, সেই প্রশ্নগুলো কোচিং সেন্টার কিংবা পরিচিতজনদের জানিয়ে দেন।
এর ফলে কোচিং সেন্টার কিংবা নিকটাত্মীয় এই প্রশ্নগুলো অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন। এছাড়া একটি চক্র টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের কাছ থেকে সাজেশনমূলক প্রশ্ন সংগ্রহ করেন বলেও সামনে এসেছে। সেই সাজেশন পরীক্ষার্থীদের পড়িয়ে পরীক্ষার হলে পাঠান। যখন পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন কমন পড়ে তখন প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর আমরা এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের প্রশ্ন বলে দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। এ নিয়ে আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের কড়া নির্দেশনা থাকার পরও যদি প্রশ্ন প্রণয়নকারীরা আমাদের কাছে জমা দেওয়া প্রশ্ন অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন, তাহলে সেটি অপরাধ। আর অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পিএসসি অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিটি নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগ ওঠায় আমরা নানা বিষয় খতিয়ে দেখছি। প্রশ্ন প্রণয়নকারীরা যদি প্রশ্ন কারো সঙ্গে শেয়ার করেন, তাহলে সেটি অন্যায়। আমরা এটি খতিয়ে দেখছি।
কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, রয়েছে বাড়ি-গাড়িও
প্রাথমিক অনুসন্ধানে সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠা করেছেন কোচিং সেন্টারও।
এই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে গিয়ে নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। গড়েছেন বাড়ি-গাড়ি। এই অসাধু ব্যক্তিদের ধরতে নানা ভাবে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে পিএসসি। কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধরতে চিরুনি অভিযান চালানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, পিএসসি’র বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষকসহ নানা মাধ্যমে এমসিকিউ পরীক্ষার সাজেশনমূলক প্রশ্ন সংগ্রহ করেন। সেই প্রশ্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের পড়ান। প্রশ্ন থেকে পরীক্ষায় কমন আসলে সাধারণ প্রার্থীরা মনে করেন, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আদতে তা নয়; যা সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা বুঝতে পারেন না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পিএসসিতে চাকরি করেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা উপার্জনের জন্য নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। এর ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। পিএসসিতে কর্মরত যেসকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেন কিংবা কোচিং সেন্টার খুলে ব্যবসা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া কিংবা কোচিং প্রতিষ্ঠান খুলে তা পরিচালনার সুযোগ নেই। এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিএসসি’র ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত
প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকালে কমিশনের জরুরি সভায় অভিযুক্তদের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে পিএসসি’র একটি দায়িত্বশীল সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন, পিএসসি’র উপ-পরিচালক আবু জাফর, উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান এবং অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম।