কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, রয়েছে বাড়ি-গাড়িও
সরকারি চাকরিবিধি ভঙ্গ করে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তারা। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযানে নামতে যাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর নড়েচড়ে বসেছে লাখো তরুণের আস্থার প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠা করেছেন কোচিং সেন্টারও।
এই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে গিয়ে নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। গড়েছেন বাড়ি-গাড়ি। এই অসাধু ব্যক্তিদের ধরতে নানা ভাবে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে পিএসসি। কোচিং বাণিজ্যে জড়িত পিএসসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধরতে চিরুনি অভিযান চালানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, পিএসসি’র বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষকসহ নানা মাধ্যমে এমসিকিউ পরীক্ষার সাজেশনমূলক প্রশ্ন সংগ্রহ করেন। সেই প্রশ্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের পড়ান। প্রশ্ন থেকে পরীক্ষায় কমন আসলে সাধারণ প্রার্থীরা মনে করেন, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আদতে তা নয়; যা সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা বুঝতে পারেন না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পিএসসিতে চাকরি করেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা উপার্জনের জন্য নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। এর ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। পিএসসিতে কর্মরত যেসকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেন কিংবা কোচিং সেন্টার খুলে ব্যবসা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া কিংবা কোচিং প্রতিষ্ঠান খুলে তা পরিচালনার সুযোগ নেই। এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশ্নফাঁসে জড়িতরা আদালতে জবানবন্দী দিচ্ছেন, কারাগারে ১০
গত ১২ বছরে বিসিএস পরীক্ষাসহ সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার ১৭ আসামির মধ্যে ১০ জনকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিচ্ছেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা ১৭ আসামিকে আদালতে হাজির করেন। এর মধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেন এবং লিটন সরকার মোট ৭ জনকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। বাকি ১০ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়।
এদিকে ১০ আসামির পক্ষে ফারুক আহাম্মদ, কাওসার আহমেদসহ কয়েকজন আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এই জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।