বিসিএস প্রশ্নফাঁস ইস্যু: গণমাধ্যমকে পিএসসি’র ৫ প্রশ্ন
‘বিসিএসসহ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস’ নিয়ে দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। সংস্থাটি বলছে, প্রতিবেদনটি ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নও তুলেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। আজ সোমবার (৮ জুলাই) পিএসসি’র একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কোনো ধরনের অনিয়ম ছাড়া গত কয়েক বছর ধরে পিএসসি চাকরির সুপারিশ করছে। মৌখিক পরীক্ষার উত্তীর্ণ করাতে অনেক তদবির হলেও তা আমলে নেওয়া হয় না। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার কারণে চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা অর্জন করেছে পিএসসি। একজন কৃষক কিংবা রিকশাওয়ালা সন্তানও বিসিএস ক্যাডার হচ্ছেন। যদি অনিয়ম হত, তাহলে তারা চাকরি পেতেন না।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রশ্নপত্র ফয়েল পেপারে বাধাই করা থাকে। পরীক্ষার আগে এই ফয়েল পেপার খুলে কোনো প্রশ্ন বের করা অসম্ভব। সাংবাদিকরা জাতির চতুর্থ স্তম্ভ। যে সংস্থার প্রতি লাখো তরুণের আস্থা রয়েছে, সেই সংস্থাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্বে প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে একটু খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল। একজন পিয়ন কখনো বিসিএস ক্যাডার বানাতে পারে না। কেউ যদি কঠোর অধ্যবসায় না করে তাহলে তিনি বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হতে পারবেন না। কাজেই ঢালাওভাবে অভিযোগ করার আগে পিএসসি’র পুরো কার্যক্রমকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল।
প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে পিএসসি’র প্রথম এবং প্রধান প্রশ্ন হলো- রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার কোন সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা হবে সেটির লটারি হয়েছে গত শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে। তাহলে চ্যানেল-২৪ এর কাছে সকাল ৯টায় প্রশ্ন কীভাবে গেল? যদি তারা প্রশ্ন পেয়েই থাকেন, তাহলে চার সেটের প্রশ্ন একসঙ্গে পেতে হবে; যা আদতে খুব কঠিন। এই তথ্যটিও প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।
প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে পিএসসি বলছে, প্রতিবেদনে একজন সদস্যের কক্ষ থেকে একজন উপ-পরিচালক প্রশ্ন বের করেছেন বলা হয়েছে। তবে পিএসসি সদস্যের কক্ষে কোনো প্রশ্ন থাকে না। সদস্যদের কক্ষে পাণ্ডুলিপি থাকে। যারা বিসিএসের ক্যাডার, নন-ক্যাডারের প্রশ্ন করেন, তারা হাতে লিখে প্রশ্ন জমা দেন। সেই প্রশ্নগুলো একত্রিত করে রাখা হয়। এটিকে পাণ্ডুলিপি বলা হয়। এই পাণ্ডুলিপিও ফয়েল পেপারে আবব্ধ থাকে। এটি খোলার কোনো উপায় নেই। তাহলে ওই উপ-পরিচালকের প্রশ্ন বের করার তথ্যটিও বানোয়াট বলেই ধরা যায়।
সাংবিধানিক সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রকাশিত প্রতিবেদনে একজন ব্যক্তির বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। যাকে বলতে শোনা গেছে, যিনি পরীক্ষায় ৮০-৮৫ শতাংশ প্রশ্ন কমন পেয়েছিলেন। যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি শতভাগ কমন পাবেন। ৮০-৮৫ শতাংশ প্রশ্ন কেন কমন পাবেন। একটি চক্র বিসিএসের সাজেশন তৈরি করে তা প্রার্থীদের পড়ায়। সেখান থেকে প্রশ্ন কমন আসলে পিএসসি’র কিছু করার থাকে না। এটিকে প্রশ্নফাঁস বলা যাবে না। ফলে প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে।
পিএসসি বলছে, প্রশ্নফাঁসে জড়িত হিসেবে যাদের নাম সামনে আনা হয়েছে, তাদের কয়েকজন পিএসসি থেকে অনেক আগেই অবসরে গেছেন। যে গাড়িচালকের কথা বলা হচ্ছে, সেই গাড়িচালক ২০১৪ সালে পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়ি চালিয়েছেন। অনিয়মের কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অনেক আগেই। তবে এই তথ্য প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অবসরে যাওয়ার পর কেউ কোনো অনৈতিক কাজের সাথে জড়ালে এর দায় পিএসসি নেবে না। তবে যারা কর্মরত রয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পিএসসি সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা। এই প্রতিষ্ঠান যেমন রাষ্ট্রের; তেমনি সাধারণ মানুষেরও। সেহেতু এই প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হলে চাকরিপ্রার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। যেহেতু একটি অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু আমরা বিষয়টি তদন্ত করবো। এজন্য একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে। এই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।