চাকরিপ্রার্থীদের ইউনিক আইডি দেবে পিএসসি, এক আবেদনেই সব বিসিএস
বিসিসের আবেদনে নতুনত্ব আনছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে কেবল একটি আবেদনে প্রার্থীরা চাকরির বয়স থাকা পর্যন্ত সব বিসিএসে অংশ নিতে পারবেন। প্রথম আবেদনে প্রার্থীদের ইউনিক আইডির মাধ্যমে কাজ করবে এ প্রক্রিয়া। আসন্ন ৪৭তম বিসিএস থেকেই এই ইউনিক আইডি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
আগের বিসিএসগুলোতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রার্থীরা প্রথমে পিএসসির ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন অংশে ক্লিক করে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন। সেখানে তিনটি অপশন রয়েছে। সাধারণ ক্যাডার, উভয় ক্যাডার (সাধারণ ও কারিগরি ক্যাডার) এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার। প্রার্থীর স্নাতক পর্যায়ে পঠিত বিষয়ে যদি কোনো কারিগরি পদ না থাকে, তাহলে সাধারণ ক্যাডার অপশনে ক্লিক করতে হতো।
আর যদি কারিগরি পদ থাকে, তাহলে উভয় ক্যাডার কিংবা শুধু কারিগরি ক্যাডার অপশন বাছাই করে আবেদন বাটনে ক্লিক করতে হয়েছে। এরপরই বিপিএসসি ফরম-১ সামনে আসে। সেখানে তিনটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশে ব্যক্তিগত তথ্য, দ্বিতীয় অংশে শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য এবং তৃতীয় অংশে ক্যাডার চয়েজ-সংক্রান্ত তথ্য পূরণ করতে হয়েছে।
নির্দেশ অনুযায়ী ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করে আবেদনপত্র সাবমিট সম্পন্ন হলে কম্পিউটারে ছবিসহ অ্যাপ্লিকেশন প্রিভিউ দেখা যেত। নির্ভুলভাবে আবেদনপত্র সাবমিট হলে প্রার্থী একটি ইউজার আইডিসহ ছবি এবং স্বাক্ষরযুক্ত একটি অ্যাপ্লিকেন্টস কপি পেতেন। ওই অ্যাপ্লিকেন্টস কপি প্রার্থীকে প্রিন্ট অথবা ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হয়েছে। অ্যাপ্লিকেন্টস কপিতে একটি ইউজার আইডি দেওয়া থাকে। এটি ব্যবহার করে টেলিটক প্রিপেইড মুঠোফোন নম্বর থেকে খুদে বার্তার মাধ্যমে পরীক্ষার ফি বাবদ ৭০০ টাকা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য ১০০ টাকা জমা দিতে হতো। এরপর প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্টের সুযোগ পেতেন।
তবে চাকরিপ্রার্থীদের ইউনিক আইডি দিলে এসব ঝামেলা অনেকাংশেই কেটে যাবে। গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিটি বিসিএসে আলাদা আলাদা আবেদন করেন। কিন্তু প্রতিবারই তো একই তথ্য পূরণ করেন। এটি একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। আমরা চাইছি প্রার্থী একবার আবেদন করবেন। সেসময় পিএসসি ওয়েবসাইটে তাদের তথ্য দিয়ে ফরম অনলাইনে পূরণ করবেন। সব তথ্য ঠিক থাকলে ফরম সাবমিট করবেন।
তিনি বলেন, এই কাজটি হবে শুধু একবার। তার ইউনিক আইডি তৈরি হয়ে থাকবে পিএসসিতে। যতবার পরীক্ষা দেবেন, ততবার শুধু কিছু তথ্য আপডেট করলেই সেই আইডি দিয়েই আরেক বিসিএসে অংশ নিতে পারবেন। আবার কোনো বিসিএসে কোনো পর্যায়ে আছে তাঁর আবেদন সেটাও ওয়েবসাইটে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।
সোহরাব হোসাইন বলেন, আমরা চাইছি প্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে। আর পিএসসিতে আধুনিক করতে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিপ্রার্থীর ইউনিক আইডি থাকে। সেটি একবার পূরণ করলে তা থেকে যায়। ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের নানা পদের চাকরিতে আবেদন করতে পারেন তিনি। এ জন্য দরকারি বেশির ভাগ তথ্যই একবারের জন্যই পূরণ করতে হয়।
গত সাত বছরে ৯টি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এর মধ্যে ৩৯তম ও ৪২তম ছিল বিশেষ বিসিএস। শুধু চিকিৎসক নেওয়া হয়েছিল। বাকিগুলো সাধারণ বিসিএস। সেগুলো হলো ৩৮তম বিসিএস, ৪০তম বিসিএস, ৪১তম বিসিএস, ৪৩তম বিসিএস, ৪৪তম বিসিএস, ৪৫তম ও ৪৬তম বিসিএস।
জানা যায়, ৩৮তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী। ৪০তম বিসিএসে ৪ লাখ ১২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ৪১তম বিসিএসে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থীর আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। ৪৩তম বিসিএসে আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০টি। ৪৪তম বিসিএসে মোট আবেদন করেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন। ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আবেদন করেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার পরীক্ষার্থী। সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএসের ৩ লাখ ৩৮ হাজার প্রার্থী আবেদন করেন।
বিসিএসের বাছাই পরীক্ষা হয় তিন ধাপে। ধাপগুলো হলো- প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। প্রথম ধাপে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। দ্বিতীয় ধাপে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা)। মৌখিক পরীক্ষায় পাস নম্বর ৫০ শতাংশ।