বিসিএস পরীক্ষায় দুই বারের বেশি সুযোগ না দেওয়ার চিন্তা
দুই বারের বেশি বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ বন্ধের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। একই সাথে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট জিপিএ নির্ধারণের কথাও ভাবা হচ্ছে। জনপ্রশাসন ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একাধিক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। তবে বিষয়টি এখনও পর্যন্ত একদমই প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়। ফলে কেউ কেউ ৫ থেকে ৬টি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এতে করে যারা প্রথমবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তারা চাকরির সুযোগ কম পাচ্ছেন। বিপরীতে বড় একটি অংশের বিসিএস হয় দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
সূত্র বলছে, একাধিকবার পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার কারণে নতুন এবং পুরোনোদের মধ্যে একটি অসম প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কেননা একাধিকবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নিজের অভিজ্ঞতা এবং অধিক প্রস্তুতির কারণে এগিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে পিছিয়ে পড়ছেন ফ্রেশ গ্রাজুয়েটরা। মূলত এটি বন্ধ করতেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের অন্য মহলের কেউই এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ বন্ধের বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আমরা এই আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবারের বেশি ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও এর পেছনেও যুক্তিসঙ্গত অনেক কারণ রয়েছে। ঠিক একই কারণে বিসিএস পরীক্ষাতেও একটি কার্যকর করা যায় কিনা- সেটি নিয়েই কাজ চলছে—পিএসসি সদস্য
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় কারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন; তার একটি মাপকাঠি নির্ধারিত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুটি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি চাওয়া হচ্ছে। তবে বিসিএস পরীক্ষায় পাস করলেই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়। এ বিষয়টি নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
ওই সূত্র আরও জানায়, বিসিএসে কীভাবে মেধাবীদের আনা যায় সে বিষয়ে গবেষণা চলছে। কেননা যারা বিসিএস পরীক্ষা দেন তাদের মধ্য থেকেই সচিব, পুলিশ প্রধানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হন। কাজেই মেধাবীদের বিসিএসমুখী করতে হলে সবাইকে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এজন্য একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ বন্ধের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিএসসি’র এক সদস্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ বন্ধের বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আমরা এই আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবারের বেশি ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও এর পেছনেও যুক্তিসঙ্গত অনেক কারণ রয়েছে। ঠিক একই কারণে বিসিএস পরীক্ষাতেও একটি কার্যকর করা যায় কিনা- সেটি নিয়েই কাজ চলছে।
যারা প্রথমবার বিসিএস দেয় তাদের প্রশ্ন সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকে না। অনেকে প্রস্তুতি নেওয়ারও সময় পান না। এ কারণে একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ না দেওয়ার যে আলোচনা চলছে সেটি যথার্থ—অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন
তিনি আরও বলেন, আমরা তুলনামূলক যোগ্য ও মেধাবী গ্রাজুয়েটদের বিসিএসে নিয়ে আসার ব্যাপারে জোর দিচ্ছি। ভবিষ্যতে হয়তো সবাই বিসিএস দেওয়ার সুযোগ পাবে না। অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার সাথে সামঞ্জস্য করে বিসিএস পরীক্ষার বিষয়টি নির্ধারণ করা হতে পারে।
এদিকে একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়টি সময়োপযোগী বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, দেরিতে হলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে; এটি মেধাবীদের সরকারি চাকরির প্রতি অনুপ্রাণিত করবে। একই সাথে প্রার্থীদের মধ্যে যে অসমপ্রতিযোগিতা রয়েছে সেটিও দূর হবে।
জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যারা প্রথমবার বিসিএস দেয় তাদের প্রশ্ন সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকে না। অনেকে প্রস্তুতি নেওয়ারও সময় পান না। এ কারণে একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ না দেওয়ার যে আলোচনা চলছে সেটি যথার্থ।
তিনি আরও বলেন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করছেন। তাহলে বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে কেন যোগ্যতা নির্ধারণ করবেন না? যে ছেলে বা মেয়ে স্নাতকে কোনোভাবে পাস করেছে সে বিসিএসে টিকবে না। কেননা অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার চেয়ে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হয়। কাজেই বিসিএসে যোগ্যতা নির্ধারণ করা সময়ের দাবি।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ বন্ধের বিষয়টি সরকারের জানিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার আমি কেউ নই। বিষয়গুলো সরকারের উপর নির্ভর করছে। সরকার চাইলে বিসিএসে পরিবর্তন আনতে পারে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা সেভাবেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।