০৮ জুন ২০২৩, ০৭:৫০

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাড়ে ৫ বছরেও হয়নি নিয়োগ, বিপাকে ৬ হাজার প্রার্থী

বিসিএস  © ফাইল ছবি

৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হয়েছে গতবছর। এক বছর পার হলেও এখনও নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাড়ে ৫ বছরের বেশি অতিবাহিত হলেও নিয়োগের সুপারিশ না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাকরির অপেক্ষায় থাকা ৬ হাজার প্রার্থী।

জানা গেছে, ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ২০১৯ সালের ৩ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি হয় লিখিত পরীক্ষা। এরপর করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে কার্যক্রম। দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর গতবছরের ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করার থাকলেও তা করা হয়নি।

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জানিয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার নিয়োগের বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। এই বিধি তৈরি করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিধি সংশোধনের বিষয়ে পিএসসি তাদের মতামত দিয়েছে। এই বিধি অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিধি অনুমোদন হলে ১৫ দিনের মধ্যে ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারের নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। এজন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রেখেছেন তারা। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮তম বিসিএস থেকে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডারে নিয়োগের বৈধতা দিয়েছিল। তবে ৩৫তম বিসিএস থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত বিধি সংশোধন না করেই নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হলে বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সংশোধিত বিধি এখনো অনুমোদন হয়নি।

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, ২০১৮ সালে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় গত বছর। চূড়ান্ত সুপারিশের পর ১৫ মাস কেটে গেলেও এখনও নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি। কবে সুপারিশ করা হবে সে বিষয়ে পিএসসি স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারছে না।

তাদের দাবি, ৩৪তম বিসিএসের পর বিধি ছাড়াই বেশ কয়েকটি বিসিএসে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। পিএসসি চেয়ারম্যানের অবহেলার ফলেই ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে গেছে। নন-ক্যাডারে নিয়োগ আটকে থাকায় প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজীব। নন-ক্যাডারে সুপারিশের অপেক্ষায় থাকা এই চাকরিপ্রার্থী জানান, ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্যে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের এই সময় বাড়িতে টাকা পাঠানোর কথা, তারা বাড়ি থেকে টাকা নিচ্ছেন। বিষয়টি কতটা কষ্টকর তা কেবল ভুক্তভোগীই জানেন। অন্যান্য বিসিএসে বিধি ছাড়া সুপারিশ করা হলে ৪০তম বিসিএসে কেন করা হবে না। পিএসসি চাইলে ৪০তম বিসিএসের সুপারিশ করে বিধি নিয়ে কাজ করতে পারে। তবে তারা সেটি করছে না। দ্রুত নিয়োগ সুপারিশের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি হলেও এতে প্রার্থীদের লাভ বেশি। কেননা নিয়োগে দেরি হওয়ায় এক হাজার পদ যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে চার হাজারের বেশি প্রার্থী নিয়োগ পাবেন — পিএসসি চেয়ারম্যান

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য ২০১০ সালে একটি বিধি প্রণয়ন করা হয়। এই বিধিতে কেবল প্রথম শ্রেণির পদে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশের কথা বলা হয়। সেই বিধি ২০১৪ সালে সংশোধন করা হয়। সংশোধিত বিধিতে দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সুপারিশের সুযোগ দেওয়া হয়।

সংশোধিত বিধিতে বলা হয়েছে, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারের শূন্য পদের তথ্য উল্লেখ করতে হবে। তবে এই বিধি অনুসরণ না করে ১৭টি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮তম বিসিএস থেকে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডারে নিয়োগের বৈধতা দিয়েছিল। তবে ৩৫তম বিসিএস থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত বিধি সংশোধন না করেই নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হলে বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সংশোধিত বিধি এখনো অনুমোদন হয়নি।

শিগগিরই নতুন মতামত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে কবে নাগাদ অনুমোদন মিলবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ওই সূত্র।

জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন বিধি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী সেটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছেন। নতুন করে বিধির বিষয়ে জনপ্রশাসন ও পিএসসি’র মতামত দিতে বলেছেন। শিগগিরই নতুন মতামত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে কবে নাগাদ অনুমোদন মিলবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ওই সূত্র।

চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি হলেও এতে প্রার্থীদের লাভ বেশি। কেননা নিয়োগে দেরি হওয়ায় এক হাজার পদ যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪০তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে চার হাজারের বেশি প্রার্থী নিয়োগ পাবেন।

নন-ক্যাডারে নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিধি অনুমোদনের বিষয়টি সরকারে বিষয়। সরকার যখন চাইবে তখন বিধি অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। আমরা প্রতিনিয়ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত বিধি অনুমোদন হয়ে যাবে। বিধি অনুমোদন হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলেও জানান তিনি।