২৮ মে ২০২৩, ১৯:০৫

অনুমোদন হয়নি প্রস্তাবিত নন-ক্যাডার বিধি, ১৫ মাসের অপেক্ষা আরও বাড়বে

সরকারি কর্ম কমিশন  © ফাইল ফটো

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য তৈরি করা বিধিমালা অনুমোদন দেয়নি সরকার। এই অবস্থায় ৪০তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারছে না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে অপেক্ষায় থাকা চাকরিপ্রার্থীদের অপেক্ষা আরও বাড়ছে।

যদিও প্রার্থীদের বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না বলে দাবি পিএসসি’র। সংস্থাটি জানিয়েছে, ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সবকিছুই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। কেবল বিধিমালার অপেক্ষা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালাটি চলে আসলে ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

নন-ক্যাডারের বিধি অনুমোদনের বিষয়টি  সরকারে বিষয়। সরকার যখন চাইবে তখন বিধি অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। আমরা প্রতিনিয়ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত বিধি অনুমোদন হয়ে যাবে—পিএসসি চেয়ারম্যান

তবে পিএসসি’র এই দাবি মানতে নারাজ নন-ক্যাডারে সুপারিশের অপেক্ষায় থাকা ৬ হাজার চাকরিপ্রার্থী। তারা বলছেন, ২০২২ সালের ৩০ মার্চ ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর দীর্ঘ ১৫ মাস কেটে গেলেও এখনও নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি। কবে সুপারিশ করা হবে সে বিষয়ে পিএসসি স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারছে না।

তাদের দাবি, ৩৪তম বিসিএসের পর বিধি ছাড়াই বেশ কয়েকটি বিসিএসে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। পিএসসি চেয়ারম্যানের অবহেলার ফলেই ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে গেছে। নন-ক্যাডারে নিয়োগ আটকে থাকায় প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজীব। নন-ক্যাডারে সুপারিশের অপেক্ষায় থাকা এই চাকরিপ্রার্থী জানান, ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্যে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের এই সময় বাড়িতে টাকা পাঠানোর কথা, তারা বাড়ি থেকে টাকা নিচ্ছেন। বিষয়টি কতটা কষ্টকর তা কেবল ভুক্তভোগীই জানেন। অন্যান্য বিসিএসে বিধি ছাড়া সুপারিশ করা হলে ৪০তম বিসিএসে কেন করা হবে না। পিএসসি চাইলে ৪০তম বিসিএসের সুপারিশ করে বিধি নিয়ে কাজ করতে পারে। তবে তারা সেটি করছে না। দ্রুত নিয়োগ সুপারিশের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সংশোধিত বিধিতে বলা হয়েছে, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারের শূন্য পদের তথ্য উল্লেখ করতে হবে। তবে এই বিধি অনুসরণ না করে ১৭টি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি।

পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য ২০১০ সালে একটি বিধি প্রণয়ন করা হয়। এই বিধিতে কেবল প্রথম শ্রেণির পদে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশের কথা বলা হয়। সেই বিধি ২০১৪ সালে সংশোধন করা হয়। সংশোধিত বিধিতে দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সুপারিশের সুযোগ দেওয়া হয়।

সংশোধিত বিধিতে বলা হয়েছে, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারের শূন্য পদের তথ্য উল্লেখ করতে হবে। তবে এই বিধি অনুসরণ না করে ১৭টি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮তম বিসিএস থেকে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডারে নিয়োগের বৈধতা দিয়েছিল। তবে ৩৫তম বিসিএস থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত বিধি সংশোধন না করেই নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হলে বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সংশোধিত বিধি এখনো অনুমোদন হয়নি।

জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন বিধি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী সেটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছেন। নতুন করে বিধির বিষয়ে জনপ্রশাসন ও পিএসসি’র মতামত দিতে বলেছেন। শিগগিরই নতুন মতামত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে কবে নাগাদ অনুমোদন মিলবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ওই সূত্র।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন বিধিতে তেমন কোনো সংশোধন আনা হয়নি। বিধি সংশোধনের বিষয়ে জনপ্রশান থেকে আমাদের মতামত চাওয়া হয়েছিল। আমরা আমাদের মতামত অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তবে বিধি অনুমোদন না হওয়ায় নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কবে নাগাদ বিধি অনুমোদন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, নন-ক্যাডারের বিধি অনুমোদনের বিষয়টি  সরকারে বিষয়। সরকার যখন চাইবে তখন বিধি অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। আমরা প্রতিনিয়ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত বিধি অনুমোদন হয়ে যাবে।