বিসিএস জটে পড়েছে পিএসসি
গত চার বছরেও ৪০তম বিসিএসের নিয়োগ-প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। আরেক বিসিএস ৪১-এর প্রক্রিয়াও তিন বছর ধরে ঝুলে আছে। এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হতেই প্রায় তিন বছর লেগে যাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়। কিন্তু ১০ মাসেও ফল প্রকাশ করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
অন্যদিকে ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত জুলাই মাসে আর ৪৪ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা এখনো শুরু হয়নি। এর মধ্যেই আবার ৪৫ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কথা বলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিসিএস জটে পড়েছে পিএসসি। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ কয়েকবছরের নিয়োগ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা গেছে।
পিএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ার এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো চাকরিপ্রার্থী। এর মধ্যে আবার বিসিএসের নন-ক্যাডারে নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়েও জটিলতা শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল ৪০ তম বিসিএসের বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য পিএসসি চাহিদাপত্র পাঠিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। আবেদন করেন চার লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন প্রার্থী। প্রায় চার বছর পর এ বছরের ৩০ মার্চ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে এক হাজার ৯৬৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের গেজেট হয়নি। ফলে কবে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন, জানেন না তারা।
আবার ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে সুপারিশ পাননি এমন আট হাজারেরও বেশি প্রার্থী পড়েছেন নতুন দুশ্চিন্তায়। এতদিন একটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর নন-ক্যাডারের আবেদন নেওয়া হতো এবং পরের বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যত চাহিদা আসত, সেখান থেকে নিয়োগ দেওয়া হতো।
কিন্তু ৪০তম বিসিএস এর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৯ ই সেপ্টেম্বর , ২০১৮ পর্যন্ত সকল শুন্য পদে নিয়োগ হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ২০১৮-২০২২ পর্যন্ত নিয়োগের ধারা অব্যাহত ছিল বলে শুন্য পদের বেশির ভাগেই জনবল নিয়োগের সুপারিশ হয়ে গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মোট পদসংখ্যা ২ লাখ ৩৯ হাজার ১৫টি। তন্মধ্যে কর্মরত ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন। এতে এখনো পদ শূন্য আছে ৪৩ হাজার ৩৩৬টি পদ।
আরও পড়ুন: বিসিএস প্রিলি: কী পড়বো, কী বাদ দেব
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি আটকে থাকা চারটি বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে ১৬ হাজার পদ পূরণ করা সম্ভব হবে। বাকি পদগুলো পূরণের জন্য পরবর্তী একাধিক বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি অবিলম্বে শুরু করা প্রয়োজন।
এদিকে, বিসিএসের মাধ্যমে নন-ক্যাডার পদে ‘নতুন নিয়মে’ নিয়োগের ঘোষণার পর থেকে চাকরিপ্রার্থীরা এর বিরোধিতা করে আসছেন। ৬ অক্টোবর আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে এই মানববন্ধন করে আগের নিয়মেই নিয়োগের দাবি করেছেন তারা।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কোন শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।
এই সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করেছে আন্দোলনকারীরা। তারা জানান, বিসিএস উত্তীর্ণ অপেক্ষমাণ তালিকার প্রার্থীদের পিএসসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তরের নন-ক্যাডার শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশ করে। ২৮তম বিসিএস থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত এই নিয়মেই পিএসসি নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করেছিল। এই নিয়ম পরিবর্তন না করে আগের নিয়মেই নিয়োগের দাবি করেন তারা।
তবে ১৪ অক্টোবর এক ব্যাখ্যায় পিএসসি জানায় যে, নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য নতুন কোনো নিয়ম করা হয়নি। নন-ক্যাডার নিয়োগের পদ উল্লেখ করার বিধিটি সরকার ২০১০ সালে করে। সেটি ২০১৪ সালে সরকারই সংশোধন করে। পিএসসি সরকারের সেই বিধি অনুসরণ করে। এ নিয়োগবিধি আগে যেমন ছিল, তেমনই রয়েছে।
বিসিএসের জট কাটিয়ে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পিএসসিকে পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি বলেছেন, পিএসসি একটি বিসিএস আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।