দ্বিতীয় দিনেও সীমাহীন দুর্ভোগে অফিসমুখী মানুষজন

রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় রিকশার রাজত্ব
রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় রিকশার রাজত্ব  © টিডিসি ফটো

সীমিত আকারে বিধিনিষেধ আরোপের দ্বিতীয় দিনেও ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে অফিসমুখী সাধারণ মানুষজনকে। অবনতিশীল করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে চলাচলে বিধিনিষেধ এবং সবধরণের গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে সরকারি, বেসরকারি অফিস সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। যারফলে গণপরিবহন না থাকায় অফিসে পৌঁছোতে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে সাধারণ মানুষজনকে।

আজ মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকালে রাজধানীর আসাদগেট, শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি-৩২, কলাবাগান ও সায়েন্স ল্যাবরেটরী এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাস্তার দু'পাশেই অপেক্ষামান রয়েছেন অনেক মানুষ। উপায়ন্তর না দেখে অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে রওনা দিচ্ছেন।

তবে কোথাও কোন গণপরিবহণ দেখা না গেলেও এসব সড়ক ছিলো ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের দখলে। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির অত্যাধিক চাপে তৈরি হয় তীব্র যানজটের। সড়ক জুড়েই দীর্ঘ গাড়ির সাড়ি দেখা যায়। গণপরিবহণ না থাকার সুযোগে রিকশা, সিএনজিসহ অন্যান্য ছোটখাটো পরিবহণ গুলোকে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া হাঁকতেও দেখা যায়।

ধানমন্ডি-৩২ থেকে গুলিস্তান পৌঁছাতে যানবাহনের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অফিস খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ রাখার যুক্তিকতা হয়না। সকল প্রতিষ্ঠান নিজস্বভাবে গাড়ি সরবরাহ করতে পারে না। এখন এই পরিস্থিতিতে কি করে অফিসে যাব আবার কি করে বাড়িতে আসবো?

দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও সিএনজি কিংবা মোটরসাইকেলে উঠতে না পেরে কলাবাগান থেকে মতিঝিল যাওয়ার উদ্দেশ্যে রিকশা ঠিক করতে ব্যাপক দরকষাকষি করতে দেখা গেলো ব্যাংক কর্মচারী আলাউদ্দিন ভূঁইয়াকে।

তিনি বলেন, অফিসারদের জন্য স্পেশাল গাড়ি আছে। আমরা যারা সাধারণ কর্মচারী আমাদের কি হবে? মতিঝিল পর্যন্ত পৌঁছাতে রিকশা ভাড়া চাইছে আড়াইশো টাকা। এভাবে কিভাবে পৌঁছানো যায়? যত ভোগান্তি সব আমাদের মতো সাধারণ মানুষের।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গতকাল সোমবার (২৮ জুন) থেকে ‘সীমিত পরিসরে’ লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। রবিবার (২৭ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউন দিয়ে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এই সময়ে সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল দিয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধি-নিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২৮ জুন সকাল ৬টা থেকে ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

বিধিনিষেধ:
১. সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

২. সব শপিংমল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

 ৩. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (শুধুমাত্র অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।

৪. সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধু প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেওয়া করতে হবে।

৫. জনসাধারণকে মাস্ক পরার জন্য আরও প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব সিনিয়র সচিব/সচিবেদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।