জেলায় লকডাউন, সংসার চালানো নিয়ে বিপাকে চালকরা

অটোভ্যান নিয়ে বসে আছেন এক চালক
অটোভ্যান নিয়ে বসে আছেন এক চালক  © টিডিসি ফটো

অভাবের তাড়নায় পরিবারের খরচ জোগাতে অল্প বয়সে পড়াশুনা পাট চুকিয়ে কিশোর কিংবা বয়স্করা চালাচ্ছেন অটোভ্যান। এতেই যা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনরকম চলে যায় তাদের সংসার। তবে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লকডাউন দিয়েছে সরকার।

এদিকে, কয়েকটি সীমান্ত জেলায় করোনা শনাক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় দেওয়া হয়েছে কঠোর লকডাউন। এতে বিপাকে পড়েছেন অটো ভ্যানচালকরা। সংসার চালতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের। এসব ভ্যানচালকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।

কঠোর লকডাউনের আওতায় রয়েছে সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরাও। এ জেলায় দিনে নয়টা থেকে বারোটা (তিন ঘন্টা) পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব চালু রাখার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসক। তবে এ সময়ের মধ্যেও অটোভ্যান নিয়ে বের হলে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে অটো চালকদের।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আব্দুর রাজ্জাক নামের এক অটো ভ্যানচালক বলেন, ছোট একটা কোম্পানির চাকরি করতাম। যা বেতন পেতাম তা দিয়েই চলে যেত আমার সংসার। কিন্তু লকডাউনের কারণে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অভাবের কারণে তাই বাধ্য হয়ে অটোভ্যান চালিয়ে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছিলাম।

তিনি বলেন, কঠোর লকডাউনে এক দুই ঘন্টা রাস্তায় ভ্যান নিয়ে বের হই। এতে পুলিশ আমাদের মারছে না; তারা ভ্যানের চাকা ফুটো করে দিচ্ছেন। এমনকি আজকে আমার কোন দোষ না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। যদি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় না বের হয় তাহলে না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।

সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার অটোচালক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এই অটো ভ্যানের উপার্জনেই চলে আমার সংসার। এক দিন চাল না কিনলে ঘরে চুলা জ্বলে না। সংসারে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল ও এনজিওর কিস্তি তো আছেই।’

তিনি বলেন, ‘কঠোর লকডাউনে অটোভ্যান তিন ঘন্টা চালানোর অনুমতি দিলেও বের হলে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। তবুও ভ্যান নিয়ে বের হতে হবে। না হলে পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকবে। সন্তানদের মুখে খাবার দিতে না পারলে খুব কষ্ট হয়।

খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার অটোভ্যান চালক আকবর আলী বলেন, সম্প্রতি দেওয়া এই কঠোর লকডাউনে আমরা মসিবতে পড়েছি। ছেলে-মেয়েসহ সংসারের খরছ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছি। কি করব! আমার রোজগারের টকায় চলে আমার পরিবার। ভ্যান চালিয়ে বাড়ি ফিরলে সবাই তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। কিন্তু কয়েকদিন বাসায় বসে আছি। বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে দিন পার করছি। আত্মসম্মানের জন্য কারোর কাছে চাইতেও পারি না।


সর্বশেষ সংবাদ