করোনাকালেও বয়স না বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা, আন্দোলনের চিন্তা
দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। কিন্তু সরকার সে দাবি মেনে নেয়নি। এরমধ্যে গত বছরের শুরু থেকে করোনা মহামারির কারণে তেমন কোনো বড় চাকরির বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ হয়নি। ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিশেষ করে করোনাকালে যাদের বয়স শেষ হয়েছে কিংবা শেষপর্যায়ে রয়েছে তারা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। এ অবস্থায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত হবে, তা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়। পরে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ সব ধরনের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
এ অবস্থায় চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবেদনের বয়স প্রায় পাঁচ মাস ছাড় দেয় সরকার। বলা হয়, ২৫ মার্চ যাদের বয়স ৩০ বছর হবে তারা আগস্ট কিংবা পরবর্তী সময়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ২৬ মার্চের পর আগস্ট পর্যন্ত যে সব চাকরির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দিতে পারেনি- তারা আগস্টের পর থেকে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারা, ২৫ মার্চ আবেদনকারীদের বয়স ৩০ বছর হতে হবে বলে ধরা হবে। এটুকু দিলে চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
তবে এ উদ্যোগে তেমন লাভ হয়নি বলে দাবি করছেন চাকরিপ্রাত্যাশীরা। তারা বলছেন, এ সময়ের মধ্যে তেমন চাকরির সার্কুলার হয়নি। এছাড়া পরে বিসিএস, এনএসআইসহ যেসব বড় সার্কুলার হয়েছে সেগুলোতেও বয়সের বিবেচনা করা হয়নি। এতে করোনাকালে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ কিংবা ৩২ করার বিকল্প নেই বলে তারা মনে করছেন। এমনকি বিষয়টি বিবেচনা না করলে শিগগিরই আন্দোলন শুরু করবেন বলেও জানিয়েছেন।
চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ ও ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা এখন এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। বিশেষ করে যারা করোনাকালে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তা পুষিয়ে নিতে করণীয় বিষয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। তখন চাকরির পরীক্ষা শুরু হলে বড় পরিসরে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছেন বলে তারা জানিয়েছেন। তবে এখন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এ বিষয়ে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘করোনাকালে বয়স নিয়ে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাকে আমি প্রতারণা বলবো। কারণ এ সময়ে তেমন কোনো সার্কুলারই হয়নি। সর্বশেষ বড় যে সার্কুলার হয়েছে তাতেও বয়স বিবেচনা করা হয়নি। মূলক চাকরিপ্রার্থীদের সাময়িকভাবে শান্ত রাখার জন্য তখন ওই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। বয়স না বাড়ানোতে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রার্থীরা। এখন করোনা তাদের আরও বেশি ক্ষতি করে গেল।’
তিনি বলেন, ‘বেকারদের এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে বয়স বাড়ানোর বিকল্প নেই। এটি নিয়ে আমার দীর্ঘদিন আন্দোলন করছি। বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০ করারও দাবি জানিয়েছি। সম্প্রতি একজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি সংসদে বিষয়টি তুলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া আমরা এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষা করছি।’ এরপর ঘোষণা দিয়ে বড় পরিসরে আন্দোলন করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ চাই আন্দোলনকারীদের আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবেল আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘করোনাকালে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ অবস্থায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করার দাবিতে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো জবাব পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। তবে অনেকেই ঢাকায় না থাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তেমন কিছু করতে পারছি না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে আমরা ফের বড় পরিসরে আন্দোলন করার চিন্তা করছি। কর্মসূচি ঘোষণা করার আগে আমরা এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনা করব।’
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের উপহার এবং করােনায় হারানাে বয়সের প্রণােদনা হিসেবে সরকারের কাছে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করার দাবিটি তুলে ধরছেন তারা। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিকট স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। তবে বয়স বৃদ্ধি না করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা ৩২ চাই আন্দোলনকারীদের। ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরাও একই পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা পুর্নবিন্যাসের সময় এসেছে বলে জানিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছিলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ কিংবা ৪০ বছর করা যেতে পারে। এ ছাড়া অবসরের বয়সও ৬৫ করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কথা বলেছিলেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তার এ বক্তব্য আশা দেখিয়েছিল চাকরিপ্রার্থীদের। তবে শেষ পর্যন্ত বয়স না বাড়ানোয় আশাহত হয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।