বিভক্ত প্রার্থীরা, পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে অটুট ‍বিএসসি

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি  © ফাইল ফটো

আগামী ৫ ডিসেম্বর সমন্বিত সাতটি ব্যাংকের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেয়া-না দেয়া নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়াসহ কয়েকটি কারণে পরীক্ষা স্থগিত চান চাকরি প্রার্থীদের একটি অংশ। অপরদিকে দীর্ঘ আট মাস পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে, অনেকেই বেকার জীবন-যাপন করছেন। এমন অবস্থায় বেকারত্মের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পরীক্ষা আয়োজনের দাবি অন্যপক্ষের।

এদিকে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে অটুট অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি)। বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর চাকরিজীবীদের অনেকেরই বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা এলপিআরএ চলে গেছেন। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না। তাই পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন অফিসার নিয়োগ দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। যদি পরীক্ষা স্থগিত করা হয় তাহলে এই সমস্যা আরও তীব্র হবে। তাই তারা পরীক্ষা নিতে চান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব আরিফ হোসেন খান শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি শেষ মুহূর্তে কোনো নিষেধাজ্ঞা না আসে তাহলে নির্ধারিত তারিখেই সাত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হবে। আমরা কোনোক্রমেই পরীক্ষা স্থগিত করতে চাই না।

যারা পরীক্ষা স্থগিত চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমানে যানবাহন সচল রয়েছে। পরীক্ষার আগের রাতে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে এসে পরীক্ষা দেয়া যাবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আমরা পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়েছি। প্রতিটি কেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই। একজন প্রার্থী বাড়িতে থেকেও সংক্রমিত হতে পারেন। একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন আবেদনকারীদের একাংশ। তারা বলছেন, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে পরীক্ষা আয়োজন না করাই ভালো। গত ৮ মাস ধরে পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। সেখানে আর কয়েক মাস স্থগিত থাকলে খুব একটা সমস্যা হবে না। কিন্তু পরীক্ষা দিতে এসে যদি কেউ সংক্রমিত হয় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব কেউ নেবে না। ফলে পরীক্ষা পেছানোটাই যুক্তিযুক্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের প্রার্থী মো. ইকবাল জানান, শীতের হাওয়া বইতে শুরু করায় করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭ ব্যাংকের পরীক্ষায় সব মিলিয়ে রাজধানীতে প্রায় আড়াই লাখ লোকের সমাগম হবে। এতে অনেকেই সংক্রমিত হবেন। এই অবস্থায় পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত অমানবিক। এছাড়া ঢাকায় অনেকেই তাদের মেস ছেড়ে দিয়েছে। তারা পরীক্ষার আগের দিন ঢাকায় গিয়ে কারো বাসায় থেকে পরীক্ষা দেবে সেই সুযোগ নেই। এই অবস্থায় পরীক্ষা স্থগিত করাই যথাযুক্ত হবে।

এদিকে দীর্ঘ আট মাসেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। করোনার কারণে অনেকেই প্রাইভেট চাকরি কিংবা টিউশন হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করছে। এমন অবস্থায় সাত ব্যাংকের পরীক্ষা হলে তাদের বেকারত্ব ঘুচবে বলে অভিমত আবেদনকারীদের। তাই নির্ধারিত তারিখেই পরীক্ষা নেয়ার দাবি তাদের।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জের প্রার্থী মো. ইউনুস আলী জানান, বর্তমানে দেশের প্রায় সব কিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া করোনার অজুহাতে কয়েকবার পরীক্ষার তারিখ পেছানো হয়েছে। বেকারত্মের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পরীক্ষা কোনো বিকল্প নেই। যারা এতদিন কোনো পড়ালেখা করেনি। ঘুরে বেরিয়েছে তারাই পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ নভেম্বর সাত ব্যাংকের ৭৭১টি সিনিয়র অফিসার পদের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি)। সরকারের কাছে পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি চাইলেও এখনো অনুমতি মেলেনি। এরই মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র ও আসন বিন্যাস প্রকাশ করে বিএসসি। এর পরই পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছেন প্রার্থীরা।

প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার ৬৭টি কেন্দ্রে এক লাখ ৪০ হাজার ১৫৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন বলে জানানো হয়। ৭৭১টি পদে নিয়োগ পেতে ৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার পরীক্ষা দেবেন চাকরি প্রত্যাশীরা। এ ঘণ্টার পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে।

এই সাত ব্যাংক হলো সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশ ও কর্মসংস্থান ব্যাংক।