স্বস্তিতে দিন কাটছে সরকারি চাকরিজীবীদের, অন্যদের সামনে অন্ধকার
করোনা পরিস্থিতির কারণে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের কাজের সুযোগ বন্ধ হয়েছে। ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। রাজধানীর অনেক বেসরকারি চাকরিজীবীর একই অবস্থা। চরম সংকটে দিন কাটেছে তাদের। এরমধ্যেও স্বস্তিতে দিন কাটছে সরকারি চাকরিজীবীদের। করোনা পরিস্থিতিতেও তাদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে সামান্য বিঘ্নও ঘটেনি বলে জানা গেছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্য অনুযায়ী, করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ৩৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০১৬ মোতাবেক, দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সালের অনুমিত হিসাবে তা নেমে আসে সাড়ে ২০ শতাংশে। সিপিডির মতে, করোনার কারণে ভোগের বৈষম্য পৌছেছে দশমিক ৩৫ পয়েন্টে।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন মাহিদুল ইসলাম। গত মার্চে ফুল বেতন পেলেও এরপর আর পূর্ণ বেতন পাননি। এপ্রিলে অর্ধেক বেতন পেলেও মে মাসের বেতন বাকি। ফলে দুই মাসের বাড়িভাড়া বকেয়া। বাধ্য হয়ে ঈদের সময় স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামে রেখে এসেছেন।
মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১২ হাজার টাকা বাড়িভাড়া আর বাকি টাকা দিয়ে সংসার চলে যায়। এখন বেতনই দিচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। কীভাবে চলবে? এজন্য বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিয়েছি।’
জানা গেছে, বাড়িভাড়া দিতে না পেরে অনেকেই পরিবার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেকে স্বল্প খরচের বাসায় উঠছেন। কেউবা আবার স্থায়ীভাবে গ্রামে ফিরে গেছেন। অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া কমিয়ে দিলেও এখন আরভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না।
একটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি দুটি ভবন ভাড়া নিয়ে রাজধানীর পান্থপথে কাজ করে আসছিল। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন, ‘ব্যবসার অবস্থা খারাপ। তাই একটি ভবন ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালা ছাড়বেন না। বলেছেন, আপাতত ভাড়া না দিলেও সমস্যা হবে না। এরমধ্যে কর্মীদেরও বেতন কমাতে বাধ্য হয়েছি।’
জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের তিন মাসের মধ্যে মধ্যে ৬৬ দিনই ছিল সরকারি সাধারণ ছুটি। এ সময়ে সব ধরনের অফিস ও ব্যবসা-বাণিজ্যই বন্ধ থাকায় ফলে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাননি বেসরকারি চাকরিজীবীরা। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। ফলে কষ্টে আছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। আয় কমেছে শ্রমজীবীদের। দোকান ও মার্কেট দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কর্মচারীদেরও বেতন পাচ্ছেন না।
তবে সরকারি চাকরিজীবীদের অনেককে অফিসে যেতে না হলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রয়েছে আর্থিক সুবিধা। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, করোনার কারণে ১ম-৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা মারা গেলে তাঁর পরিবার অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পাবে। এর বাইরে আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
এদিকে গার্মেন্টসেও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের হিসাবে পাঁচ-সাত হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা কয়েক দফায় সাভার ও আশুলিয়ায় মানববন্ধন, অবরোধ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের ৪৬১ কারখানায় মে মাসের বেতন দেওয়া হয়নি।
শুধু পোশাক খাত নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর মিলেছে। এছাগা সরকারি চিকিৎসকরা নানা সুবিধা পেলেও বঞ্চিত হচ্ছেন বেসরকারি চিকিৎসকরা। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ছাঁটাই, বেতন কমানোসহ নানা ঘটনাও ঘটছে।
অপরদিকে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংকটে রয়েছেন ১০ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী। অন্তত সাত হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছেন ৮০ হাজার নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার অন্তত ২৫ হাজার শিক্ষক সামান্য বেতন-ভাতা পান। একই চিত্র বেসরকারি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে। নিয়মিত বেতন নেই প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ছয় লাখ শিক্ষকের।
বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা তেমন বেতন পান না। অনেকেই প্রাইভেট-টিউশনি করেন। কিন্তু এখন সব বন্ধ রয়েছে।’
কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘বেতন, বিল বাকি পড়ায় অনেক স্কুলের আর কার্যক্রম ধরে রাখতে পারছে না। অনেকে স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে।’