করোনা: চরম অনিশ্চয়তায় ফ্রিল্যান্সার ও আউটসোর্সিং কোম্পানি
বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশে দেশে ফ্রিল্যান্সার ও আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তারই ধারাবাহিতায় বাংলাদেশেও নজিরবিহীন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এই খাত। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কাজের বিজ্ঞপ্তি কমেছে ৩০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত। এতে বিডের পরিমাণও কমেছে অনেকে। ফলে এ খাতে যারা কাজ করছিলেন তাদের কারও কাজ কমেছে, কেউবা বেকার সময় পার করছেন।
এমনই একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার মেসবাহ উদ্দিন নাঈম, যিনি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চুক্তিতে কাজ করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। তবে গত মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকেই তিনি এবং তার মতো যারা একাজে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পড়তে শুরু করে।
এর কারণ, এ খাতের সবচেয়ে বড় ক্রেতাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আক্রান্ত হতে থাকে করোনাভাইরাসে। আর করোনার ভয়াল থাবায় ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ের চাহিদাও কমতে শুরু করে। কারণ মার্কেটিং, কনটেন্ট লেখা, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট- এসব ফেলে এখন সবার লড়াই একটাই, কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা।
বাংলাদেশে বর্তমানে কতজন ফ্রিল্যান্সার রয়েছে তার নির্দিষ্টি হিসাব নেই। তবে তাদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘একমাসের মধ্যে আমরা একটি তালিকা করতে পারবো বলে আশা করছি।
করোনাভাইরাস এ খাতে এমন এক সময় থাবা বসিয়েছে যখন বিশ্বের বড় বিনিয়োগকরীরা এখানে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ ও পাকাপোক্ত করছিলেন। ফ্রিল্যান্সাররাও এখানে কাজ করে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং খাতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা সহসাই ঠিক হওয়ার আশা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এ অবস্থায় চরম উদ্বিগ্ন নাঈম বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা করণীয় তা হলো অপেক্ষা করা এবং ভালো কিছু পরিবর্তনের জন্য আশা করা।’
আরেত ফ্রিল্যান্সায় গ্রাফিক ডিজাইনার এমরাজিনা ইসলাম বলেন, ‘এ খাতে যার কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ক্রেতার জন্য কাজ করছেন তারা এখনো সেগুলো ধরে রাখতে পেরেছেন। তবে এটি যদি আগামী দু’তিন মাস অব্যাহত থাকে, তাহলে সমগ্র খাত বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।’
করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদেরকে বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো তাদের অফিস খোলা রেখেছে। ক্রিয়েটিভ ক্লিপিং পাথ লিমিটেড (সিসিপিএল)-এর এক তৃতীয়াংশ কর্মী তাদের প্রকল্প শেষ করার জন্য অফিস থেকে কাজ করছেন। তাদের কাজগুলো করোনার আগেই শুরু হয়েছিলো।
সিসিপিএল-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মনির হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত কর্মীদের বেতন দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে কতদিন অব্যাহত রাখা যাবে তা অনিশ্চিত। তিনি বলেন, ‘কোন নতুন প্রকল্পের বিড পাওয়া যাচ্ছে না।’
খাত সংশ্লিষ্টরা আরো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিশ্বের অনেক দেশ যখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরবে তখন বাংলাদেশে শাটডাউন হওয়ার একটা সম্ভবনা রয়েছে। সেটি হলে তা এ খাতের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তখন ক্লায়েন্টরা ভিন্ন দেশের কোম্পানীতে চলে যেতে পারে।
একজন কর্মী বলেন, ‘এ খাতে কাজ করা অনেকের ভালো অভিজ্ঞতা থাকলেও ডিগ্রি নেই। ফলে কোনো কারণে চাকরি চলে গেলে তার নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা কঠিন হবে।’
বাংলা অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির জানান, বাংলাদেশে প্রতিবছর ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে ২৫ থেকে ৩০ কোটি ডলার আয় হয়। প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া প্রদান ও কর্মীদের ছয় মাসের বেতন প্রদানের বিষয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে।
এছাড়া এ খাত রক্ষায় তারা আরও কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। তার মধ্যে দুই শতাংশ সুদে ঋণের ব্যবস্থা এবং দেশব্যাপী টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএস) খরচ ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি রয়েছে।
এ ব্যাপারে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এ এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সারদের সহযোগিতা করার জন্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য বাঁধাহীন ইন্টারনেট সেবারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’