বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর, চাকরি না পেয়ে ডেলিভারী বয়ের কাজ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চাকরির সম্ভাবনা ঠিক কতখানি? চপ বা তেলেভাজা শিল্প নিয়ে মিম তৈরি হতে হতে এখন মিম তৈরিও রাজ্যে প্রায় শিল্পের পর্যায়েই চলে যাচ্ছে। আর রইল কথা অর্থ সংস্থানের, সেখানে প্রথাগত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা ডিগ্রি পাওয়া আম মানুষের অবস্থাটা ঠিক কী তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন এই শহরেরই আরেক স্নাতক পড়ুয়া।
অনলাইনে জোমাটো থেকে খাবার অর্ডার করে সম্ভবত এমন অনুতাপ হয়ত তার জীবনে হয়নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর হয়েও মীরাজ নামের এক যুবক শেষমেশ বেছে নিয়েছেন ‘ডেলিভারি বয়ে'র কাজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারও চাকরি না পেয়ে সারাদিন ঘুরে ঘুরে কলকাতাকে খাবার জুগিয়ে যাচ্ছেন।
ফেসবুকে সৌভিক দত্ত নামের একজন লিখেছেন, ‘সম্ভবত এই প্রথম জোমাটো থেকে খাবার অর্ডার করে এত দুঃখ হচ্ছে। বাণিজ্য বিভাগের স্নাতকোত্তর একজন ব্যক্তি! কত কী চাকরি পাওয়ার যোগ্য তিনি, এমনই আমাদের রাজ্যের অবস্থা!’ এরপর থেকে তার এ পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
সৌভিক তার পোস্টে জানিয়েছেন যে, অনলাইনে খাবার অর্ডার করে তিনি দেখেন, যে ব্যক্তি তাকে খাবার পৌঁছে দিতে আসবেন সেই ‘ডেলিভারি বয়' বাণিজ্য বিভাগের স্নাতকোত্তর! শিক্ষিত একজন মানুষ অন্য কোনও চাকরি না পেয়ে দরজায় দরজায় খাবার সরবরাহের কাজ করছেন দেখে অবাক হয়ে যায় সৌভিক। তিনি জানিয়েছেন, ‘মীরাজ যখন আমাকে খাবার ডেলিভার করে বলেন, ‘রেটিংটা ভালো দিয়ে দেবেন স্যার', আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিল!’
সৌভিক লিখেছেন, ‘যখনই আমি জানতে পারি যে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.কমের স্নাতকোত্তর ছিলেন আমি তাঁর সঙ্গে কিছু কথাবার্তা বলি। আমি জানতে পারি যে তিনি ফাইন্যান্স বা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমাও করেছেন।’ স্নাতকোত্তর একজন মানুষ ‘স্নাতক কিশোরে’র কাছে শেষ পর্যন্ত খাবার সরবরাহের কাজ করছেন। বিষয়টি মাথায় গেঁথে যায় সৌভিকের।
তিনি তার পোস্টে লিখেছেন, ‘এই দেশের এখন পরিবর্তন প্রয়োজন, এই রাজ্যের এখন পরিবর্তন প্রয়োজন। চাকরির সংস্থান তৈরি করা প্রয়োজন, আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে বাস করছি, দেশকে বদলাতে হবেই।’
তার পোস্টে ইতিমধ্যেই অনেকেই নিজেদের মতামত জানিয়েছেন, শুধু তাই নয় বহু মানুষ নিজে এই পোস্ট শেয়ার করায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল তা।
মন্তব্য বিভাগে একজন লিখেছেন, ‘মীরাজ কঠোর পরিশ্রম করছে, মূল কিছু পাঠ শিখছে সে, সফল হবেই সে... নিশ্চিতভাবেই!’ অন্য আরেকজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, ‘পুরো সমাজটার পরিবর্তন প্রয়োজন।’
সূত্র: এনডিটিভি বাংলা