‘বউকে বোন পরিচয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি’ হঠাৎ ভাইরাল
‘বউকে বোন পরিচয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি’ এমন একটি সংবাদ হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষার্থী, ফেসবুক গ্রুপগুলোতে এমন একটি সংবাদ শেয়ার করা হচ্ছে। আলোচিত সেই প্রতিবেদনটি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ২০২০ সালের ২৯ আগস্টের। ৪ বছর পর সংবাদটি আবার ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল খবরটি হাসান আল মামুন তার ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা। সেখানে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ মন্তব্য করছে।
সেই পোস্টের মন্তব্য হোসাইন আহমেদ নামে একজন মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের একটি আবেগের জায়গা কিন্তু কিছু অসাধু আর দুর্নীতিবাজদের জন্য আমাদের আবেগের জায়গায় চরম আঘাত হানা দিচ্ছে’
কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না গ্রুপে মাহবুব নামে একজন খবরটি শেয়ার দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে খবরটি শেয়ার হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া সেই আলোচিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকরি পেতে জামালপুরের স্কুলশিক্ষক আশরাফুল আলম নিজের স্ত্রী ও খালাতো বোনকে জালিয়াতি করে বোন বানিয়েছেন। আশরাফুলের বাবা সহিদুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা কোটার সদ্ব্যবহার করে স্ত্রী ও খালাতো বোনকে চাকরি দিতে তিনি এ জালিয়াতি করেন।
আশরাফুল আলমের বাড়ি জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার রবিয়ার চর গ্রামে। তিনি মাদারের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়ে আশরাফুলের স্ত্রী নাসরিন আক্তার এখন খেয়ার চরে ও খালাতো বোন শাপলা আক্তার টুপকার চরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নাসরিন আক্তার ও শাপলা আক্তারের বিরুদ্ধে গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সরন মিয়া। সরন মিয়া বলেন, আশরাফুল আলম চাকরি দেওয়ার কথা বলে আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এখন ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় তিনি এলাকা ছেড়েছেন।
শিক্ষা কার্যালয় থেকে পাওয়া কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, আশরাফুল, নাসরিন ও শাপলা ২০১৬ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। তিনজনই জন্মসনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে বাবা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সহিদুর রহমানের নাম উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আশরাফুলের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। গত রোববার রবিয়ার চর গ্রামে আশরাফুলের বাড়িতে গিয়েও তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বাড়িতে খালাতো বোন শাপলা ও তাঁর মা মনোয়ারা বেগমকে পাওয়া যায়। শাপলা আক্তার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাঁর চাকরি হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। আশরাফুলই তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। এ জন্য ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। আর নাসরিন আক্তারও তাঁর বোন নয়, স্ত্রী। তিনি বলেন, তাঁর বাবার নাম বেলাল মিয়া। মুক্তিযোদ্ধা সহিদুর রহমান আসলে তাঁর খালু।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা প্রথা বাতিল করেন। ওই বছরের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের একদিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে।
গত ৫ জুন কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের পর কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলন করছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।