সরকারি চাকরিতে কোটার সংরক্ষণ চান প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান কোটা সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। জাতীয় সংসদে প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়ার কথা অবহিত করা হলেও বিষয়টি নিয়ে এখনো সরকারের অবস্থান পরিষ্কার নয়। প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আরোও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ৬ দফা দাবি তুলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণের লক্ষ্যে ৬ দফা দাবির ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ডিসেবল স্টুডেন্টস সোসাইটি অব চিটাগং ইউনিভার্সিটি (ডিসকু)।
প্রতিবন্ধী সংগঠনের সভাপতি আলহাজ উদ্দিন বলেন, ১ম ও ২য় শ্রেণী (৯ম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত) সরকারি চাকরির প্রাথমিক নিয়োগে সকল ধরনের কোটা বাতিলের সুপারিশ করেছেন কোটা সংস্কার কমিটি। ফলে আমাদের মত প্রতিবন্ধীদের শেষ সুযোগটাও আর থাকছে না।
তিনি বলেন, ১৩ আগস্ট জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীরা সুযোগ পায় না। কাজেই তাদের জন্য এখানে কোনো কোটার প্রয়োজনীয়তা নেই। অথচ ৩৯ তম বিসিএসে আমাদের বেশ কয়েকজন ভালো করা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত ১% কোটার যথাযথ ব্যবহার হয়নি।
এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের চাকরি নিশ্চিতকরণে কোটার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা এই প্রশ্নের জবাব কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওযাজেদ পুতুল দিতে পারবেন। তিনিই বলতে পারবেন প্রতিবন্ধীরা কতটুকু দক্ষ এবং মেধাবী। আর যদি প্রয়োজনীয়তা থেকেই থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন বা করবেন ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যেন আমাদেরকে জানায়।’
এ প্রসঙ্গে ভারত সংবিধানের কথা উল্লেখ করে আলহাজ উদ্দিন বলেন, ১৯৯৫ সালে ভারতের সংবিধান স্বীকৃত একটি পদের ৩৩ নং অনুচ্ছেদে Person with Disability নামে একটি কোটা সংযোজন করা হয়। যেখানে সকল সরকারি চাকরিতে ৩% প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে এটাকেও তারা প্রতিবন্ধীদের জন্য যথেষ্ট নয় মনে করে ৫% এ বর্ধিত করেন। অথচ বাংলাদেশে ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো কোটাই রাখা হচ্ছে না।
এসময় তিনি রোববারের (২৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যে প্রতিবন্ধীদের চাকরিতে নিয়োগের সুস্পষ্ট রুপরেখা দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানায়। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ঘোষণা না আসলে রোববার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সম্মুখে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেয়।
প্রতিবন্ধীদের ঘোষিত ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১ম ও ২য় শ্রেণীসহ সকল ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি করার সুযোগ করে দিয়ে নির্দিষ্ট কোটা সংরক্ষণ করা; দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করা; প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা; প্রতিবন্ধী কোটা নূন্যতম ৫% করা; প্রতিবন্ধী আইনকে সময়োপযোগী করা; প্রতিবন্ধী শিশুদের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করায় না তাদের এবং কর্মসংস্থানে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধীদের অবজ্ঞাকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া।