যে ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল প্রশিক্ষণের ঘোষণা সরকারের
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণের জন্যই দেওয়া হবে এ প্রশিক্ষণ। ৮০ হাজার কলেজ ও স্নাতক শিক্ষার্থী পাবেন এ প্রশিক্ষণ। আগামী দুই বছরে ‘ডিজিটাল স্কিলস ট্রেনিং ফর স্টুডেন্টস’ কর্মসূচির আওতায় চলবে এ প্রশিক্ষণ। ৮০ হাজার শিক্ষার্থী ও স্নাতকেরা তিনটি স্তরে প্রশিক্ষণ পাবেন। ফাউন্ডেশনাল, ইন্টারমিডিয়েট ও অগ্রগামী স্তরে শিক্ষার্থী ও গ্র্যাজুয়েটরা প্রশিক্ষণ পাবেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানী মিরপুরের ইয়ুথ টাওয়ারে এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিজিই) প্রকল্পের সম্মেলনকক্ষে ইডিজিই প্রকল্প ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পৃথক পৃথক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বাসসের খবরে বলা হয়েছে, ইডিজিই প্রকল্প পরিচালক মো. সাখাওয়াৎ হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপকেরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ইডিজিই প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে সরকার ও বিশ্বব্যাংক। পর্যায়ক্রমে আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে।
সমঝোতা স্মারক অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী দুই বছরে ৮০ হাজার শিক্ষার্থী ও গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দেবে। তিনটি স্তরে চলবে প্রশিক্ষণ। প্রথমটি হচ্ছে ফাউন্ডেশনাল বা ভিত্তিমূলক স্তর। এ স্তরে ৫০ হাজার প্রশিক্ষণার্থী ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা ও হাতেকলমে প্রশিক্ষণ পাবেন। এরপর ইন্টারমিডিয়েট বা মধ্যম স্তরে ফাউন্ডেশনাল স্তরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত জটিল ডিজিটাল বিষয়ে ২০ হাজার শিক্ষার্থী ও গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণ পাবেন। তৃতীয় স্তরটি হচ্ছে উন্নত ও অগ্রগামী। ১০ হাজার শিক্ষার্থী ও গ্র্যাজুয়েট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ পাবে এ স্তরে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রশিক্ষণের ব্যাপারে শিক্ষকদের অবহিতকরণের লক্ষ্যে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক মো. আবু সাইয়িদ, ইউজিই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার আবদুল বারী ও স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমির টিম লিডার মো. মাহফুজুল ইসলাম শামীম, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মাহমুদা নাজনীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রবিউল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সানাউল্লাহ চৌধুরী।
আইসিটি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে আইসিটি সচিব সামসুল আরেফিন জানান, অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থের অভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিনি করপোরেট রিসার্চ রেসপনসিবিলিটি ফান্ড (সিআরআরএফ) গঠনের ওপর জোর দেন এবং ইডিজিই প্রকল্প থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ৮০ হাজার শিক্ষার্থী ও স্নাতকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। এর লক্ষ্য হলো সরকার, শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্ধন আরও শক্তিশালী করা। যাতে শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে উঠে।
আইসিটি সচিব বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির যেভাবে প্রসার ঘটছে এবং যেভাবে মানুষের যুক্ততা ছাড়াই গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাতে এসব প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণে দক্ষ মানুষ তৈরি ও গবেষণা করতে না পারলে আমরা সব সময়ই প্রযুক্তির ও উদ্ভাবনের ভোক্তা হয়েই থাকব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা ও উদ্ভাবনে সরকারের সদিচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ইডিজিই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি বিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার (আরআইসি) প্রতিষ্ঠা করছে, যা উদ্ভাবন ও গবেষণার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।