১৯-কে ৯১ করে চাকরি, ৮ বছর ধরে কাজ করছেন ৪৩ জন

খাদ্য অধিদপ্তর
খাদ্য অধিদপ্তর  © ফাইল ছবি

খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষা পেয়েছেন ১৯। আর এ ফলাফল পাল্টে করা হয়েছে ৯১। দুর্নীতি দমন কমিশিনের (দুদক) তদন্তে অধিদপ্তরের খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগের জালিয়াতির এমন নজিরবিহীন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। তবে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৪৩ জন কর্মীরা গত ৮ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে এ নিয়োগের খাদ্য পরিদর্শক পদে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগের পর ৮ বছরে ধরে চাকরি করলেও অবশেষে ধরা পড়েছেন দুদকের জালে। জানা যায়, ​খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই দুর্নীতিতে অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ইফতেখার আহমেদসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত ৭ জন এবং নিয়োগ পাওয়া ৪৩ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করছে সংস্থাটি।

এর আগে, ২০১০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ৩২৮ জন খাদ্য পরিদর্শক, ১৭৫ জন উপ খাদ্য পরিদর্শক এবং ৪০৩ জন সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক নিয়োগের কথা ছিল। পরে ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর খাদ্য পরিদর্শক ও উপ খাদ্য পরিদর্শক পদে লিখিত পরীক্ষা হয়। আর ২০১২ সালের ২৫ মে সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক পদের লিখিত পরীক্ষা হয়।

পরে ১৪ সালে খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পরের বছর একটি মামলা করে দুদক। ৭ বছর ধরে সেই মামলার তদন্ত শেষে অবশেষে ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন: কর্মজীবন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থী মানসিক চাপে: গবেষণা

তদন্ত প্রতিবেদনে দুদক জানিয়েছে, ২০১১ সালে খাদ্য পরিদর্শক পদের লিখিত পরীক্ষায় নীলফামারীর জেসমিন আক্তার নামে এক আবেদনকারী পেয়েছেন ১৯। তার নম্বরটি বদলে করা হয় ৯১। নোয়াখালীর তাজুল ইসলাম ৫৫ নম্বর পেলেও দেখানো হয় ৮৯। এভাবে লিখিত পরীক্ষায় অযোগ্য ৪৪ জনের নম্বর বাড়ানো হয়। পরে ২০১৩ সালে সাজানো মৌখিক পরীক্ষার পর ২০১৪ সালে এদের উত্তীর্ণ দেখিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। 

নিয়োগে বাছাই কমিটির সদস্য ছিলেন সচিব পদমর্যাদার ইফতেখার আহমেদ। তিনি এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম বোর্ডের প্রশাসন বিভাগের সদস্য। আর খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও বাছাই কমিটির সভাপতি ইলাহী দাদ খান ছাড়াও যুগ্ম সচিব থেকে অবসরে যাওয়া নাসিমা বেগমসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত ৭ জনকে দায়ী করেছে দুদক।

দুদকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নিয়োগ পাওয়া ৪৪ জনের মধ্যে একজন চাকরিতে যোগ না দেয়ায় বাকি ৪৩ জন চাকরি করছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। কয়েক স্তরে প্রতিষ্ঠানটির এ তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই করে সম্প্রতি কমিশন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার অনুমোদন দিয়েছে।

দুদকের উপ পরিচালক আলী আকবর খানের তৈরি করা প্রতিবেদনে কাকে কত নম্বর বাড়িয়ে চাকরি দেয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। 

দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তদন্ত সাক্ষ্য স্মারক দেয়া হয়েছে। সে সাক্ষ্য স্মারক কমিশনে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র দেখা গেছে। যেহেতু দুদক এ অভিযোগ অনুমোদন দিয়েছে আমরা আশা করছি, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এটা আদালতে দাখিল করতে পারবো। 

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন জানান তারা আইন অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারি নীতিমালা রয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। [সূত্র: ডিবিসি নিউজ]